মিমিক্রিতে মুগ্ধতা ছড়ানো জেরিন
এপ্রোন
আর সবুজ ক্যাপ পরা আয়শা আক্তার জেরিন একদিকে যেমন একজন দায়িত্বশীল নার্সিং
শিক্ষার্থী, অন্যদিকে তিনি সোশ্যাল মিডিয়ার পরিচিত মুখ- মিমিক্রির অসাধারণ প্রতিভার জন্য।
একাডেমিক জীবনের গাম্ভীর্যের বাইরে তাঁর প্রাণবন্ত কণ্ঠ আর অনুকরণ দক্ষতা
নেটিজেনদের মুখে হাসি ফোটায় প্রতিদিন।ঢাকার
অদূরে মানিকগঞ্জ নার্সিং কলেজের তৃতীয় বর্ষে পড়াশোনা করছেন জেরিন। তবে তাঁর আরেকটি
পরিচয় দিন দিন ছড়িয়ে পড়ছে-তিনি একজন
দক্ষ মিমিক্রিকার ও ভয়েস ওভার আর্টিস্ট। বাংলা, ইংরেজি ও হিন্দি ভাষায় তিনি
নিখুঁতভাবে অনুকরণ করতে পারেন শিনচ্যান, ডোরেমন, মিনা, সিসিমপুরের ইকরি, নিনজা
হাতোরি সহ ত্রিশটিরও বেশি কার্টুন চরিত্রের কণ্ঠস্বর। শুধু কার্টুনই নয়, বিভিন্ন
ভিডিও ডকুমেন্টারি ও প্রতিবেদনে ভয়েস ওভার করেছেন সফলভাবে।তাঁর
এই মিমিক্রি যাত্রার পেছনে আছে এক অনুপ্রেরণাদায়ক গল্প- অপমান, সংগ্রাম আর আত্মবিশ্বাসে গড়া
এক আলাদা অধ্যায়।শৈশবে
জেরিনের বাক্প্রকাশ স্পষ্ট ছিল না। ক্লাসে শিক্ষক বা সহপাঠীরা তার কথা বুঝতে পারত
না। এ নিয়ে অভিভাবকদের কাছে শিক্ষকদের অভিযোগও আসত। তবু তিনি হাল ছাড়েননি। ছোট্ট
মনে জন্ম নেয় এক কঠিন সংকল্প- একদিন
এই কণ্ঠ দিয়েই সবাইকে তাক লাগিয়ে দেবেন। আজ সেই সংকল্পই পরিণত হয়েছে প্রতিভায়।খাগড়াছড়ির
মাটিরাঙ্গার মাস্টার পাড়া গ্রামের মেধাবী জেরিন কৃতিত্বের সঙ্গে এসএসসি ও এইচএসসি
পাস করেন। করোনাকালে ঘরে বসে কার্টুন দেখার ফাঁকে ফাঁকে অনুকরণের চেষ্টা করতে করতে
একদিন নিজেরই অজান্তে মিমিক্রিতে পারদর্শী হয়ে ওঠেন। ইউটিউব আর ফেসবুকের ভিডিও
দেখে নিজে নিজে অনুশীলন করতেন নিয়মিত। গত এক বছরে ৩০টিরও বেশি কার্টুন চরিত্রের
ভয়েস অনুকরণে হয়ে উঠেছেন নিপুণ।জেরিন
বলেন, “ছোটবেলা থেকেই কার্টুন দেখতে খুব ভালো লাগত। চরিত্রগুলোর কণ্ঠস্বর আমার
কাছে দারুণ আকর্ষণীয় মনে হতো। একসময় নিজের কণ্ঠেই সেগুলো তুলে ধরতে ইচ্ছে হলো।
ধীরে ধীরে আমি নিজেই ভয়েস শিখে ফেললাম।”শিনচ্যানের
দুষ্টু কণ্ঠ, ডোরেমনের কোমলতা কিংবা মিনার শিক্ষণীয় উচ্চারণ- সবকিছুই যেন জেরিনের কণ্ঠে জীবন্ত হয়ে
ওঠে। সোশ্যাল মিডিয়ায় তাঁর মিমিক্রি ভিডিওগুলো দিন দিন জনপ্রিয় হচ্ছে।এক
সময় যাকে অস্পষ্ট কথা বলার জন্য কেউ বুঝত না, আজ সেই কণ্ঠ দিয়েই তিনি তৈরি করছেন
নিজস্ব পরিচয়। জেরিন এখন শুধু একজন মিমিক্রিকার নন-
তিনি হয়ে উঠেছেন আত্মবিশ্বাস ও সম্ভাবনার প্রতীক।ভবিষ্যতের
স্বপ্ন সম্পর্কে জেরিন বলেন, “একদিন চাই ভয়েস আর্টিস্ট হিসেবে জাতীয় কিংবা
আন্তর্জাতিক পর্যায়ে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে।”
স্বপ্নপূরণের
পথে এগিয়ে চলা এই কণ্ঠশিল্পীর গল্প যেন প্রমাণ করে-
যার ভেতরে আত্মবিশ্বাস থাকে, সে দুর্বলতাকেও শক্তিতে রূপ দিতে
পারে। আর জেরিন, সেই সাহসী কণ্ঠস্বরের নাম।