শনিবার, ০৭ জুন ২০২৫
The Dhaka News Bangla

পবিত্র ঈদ উল আজহা নিয়ে শিক্ষার্থীদের ভাবনা ও প্রত্যাশা

ঈদ মানেই আনন্দ, উৎসব আর পরিচিত পরিসরে প্রিয়জনের কাছে ফেরা। ঈদ উল আজহা শুধু ত্যাগের বার্তাই নয়, বরং পরিবার, বন্ধু, স্বজন আর সমাজের সঙ্গে আনন্দ ভাগাভাগি করে নেওয়ার মুহূর্তও বয়ে আনে। শিক্ষার্থীদের কাছে ঈদ মানে বাড়ি ফেরা হলেও ক্যাম্পাসের বন্ধন হতে মুক্ত হতে পারে না কখনো। ঈদের এই ব্যস্ততা, প্রস্তুতি আর অনুভব নিয়ে তাঁদের ভাবনা আলাদা হলেও অনুভূতির জায়গায় অনেকাংশেই মিল। জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ঈদ-উল-আজহা নিয়ে ভাবনা ও অনুভূতি তুলে ধরেছেন বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি - অনিরুদ্ধ সাজ্জাদ।মহিমান্বিত দিনে হৃদয়ে জাগুক শান্তি ও ভালোবাসা- ইশরাত জাহান ইরা শিক্ষার্থী, দর্শন বিভাগ।ঈদ অর্থ আনন্দ। প্রতিবছর মুসলিম বিশ্বের ঘরে ঘরে আসে ঈদ। ঈদের আগমনে হৃদয়ে বয়ে যায় নতুন এক উৎসবের আবহ, আনন্দ, ভালোবাসা, সহানুভূতি আর ত্যাগের মহিমায় উদ্ভাসিত হয়ে উঠে আমাদের মন-প্রাণ। ঈদুল আযহা মুসলিম উম্মাহর জন্য একটি পবিত্র উৎসব। এটি কেবল আনন্দের নয়, বরং মহান ত্যাগের এক অনন্য নিদর্শন। এই দিনটি স্মরণ করিয়ে দেয় হযরত ইব্রাহিম (আঃ) এর আল্লাহর প্রতি নিঃশর্ত আনুগত্য ও ত্যাগের মহান ইতিহাস, যখন তিনি প্রিয় পুত্র হযরত ইসমাইল (আঃ)-কে আল্লাহর নির্দেশে কুরবানি দিতে প্রস্তুত হয়েছিলেন। এদিন মুসলমানরা ঈদের নামাজ আদায় করেন এবং আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য পশু কুরবানি করেন। সেই কুরবানির মাংস আত্মীয়-স্বজন, দরিদ্র, প্রতিবেশী ও সমাজের সকল স্তরের মানুষের মাঝে বণ্টন করা হয়। এই বণ্টনের মধ্য দিয়ে ইসলাম আমাদের শেখায় ভোগ নয়, ত্যাগেই শান্তি। শেখায় নিজের সুখ ভাগ করে নেওয়ার নামই হলো মানবতা।এই পবিত্র ঈদে আমাদের দোয়া ও ভালোবাসা যেন বিশেষভাবে পৌঁছে যায় সেইসব মানুষদের কাছে, যারা যুদ্ধ, সহিংসতা ও দুঃখ-কষ্টে দিন কাটাচ্ছেন। বিশেষত  ফিলিস্তিন এবং গাজা উপত্যকার নিরীহ মানুষগুলো ঈদের আনন্দ থেকে বঞ্চিত। প্রতিনিয়ত বোমা, ক্ষুধা, এবং অনিশ্চয়তার মাঝে তারা লড়াই করছেন অস্তিত্ব রক্ষার জন্য। আমরা প্রার্থনা করি, আল্লাহ যেন তাদের ওপর রহমত বর্ষণ করেন, তাদের ঘরে যেন ফিরিয়ে আনেন শান্তি। ঈদের এই মহিমান্বিত দিনে প্রতিটি হৃদয়ে জাগুক শান্তি ও ভালোবাসা। সবার জীবনে পবিত্র ঈদুল আযহা বয়ে আনুক নতুন আশার বার্তা। আপনি এবং আপনার প্রিয়জনদের জন্য রইলো ঈদের আন্তরিক শুভেচ্ছা ও দোয়া। ঈদ মোবারক।আত্মনিয়োগের মাধ্যমে ঈদের খুশি হোক সবার- হৃদয় আহমেদ,শিক্ষার্থী, অর্থনীতি বিভাগ। ঈদ মানেই আনন্দ। ঈদ মানেই সকাল বেলা নতুন জামা পড়ে একে অন্যের সাথে আলিঙ্গন করে সবার মাঝে ভালোবাসা ছড়িয়ে দেওয়ার এক বিশেষ দিন । ঈদের দিনে শিশুদের হাতে ঈদের সালামির খুশি, মায়েদের রান্নাঘরের ব্যস্ততা, আর আত্মীয়-স্বজনদের মিলনমেলায় তৈরি হয় এক মানবিক বন্ধন। ঈদ যেমন আমাদের মাঝে আনন্দ ছড়িয়ে দিয়ে সবাইকে খুশিতে রাখে। তেমনি এই ঈদের মাধ্যমেই আমরা নানারকম শিক্ষা অর্জন করে থাকি। ঈদুল ফিতর আমাদের মাঝে আসে আত্মশুদ্ধির এক বিশেষ উপলক্ষ হিসেবে। অন্যদিকে ঈদুল আযহা মুসলিম উম্মাহ'র জন্য ত্যাগ ও আত্মনিবেদনের এক মহান শিক্ষা নিয়ে আসে। এই দিনে মুসলিম উম্মাহ মহান আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে তাদের প্রিয় পশুগুলো কোরবানি করেন। তাদের এই আত্মনিয়োগ বা আত্মোৎসর্গের একটাই উদ্দেশ্য, তা হলো মহান আল্লাহর নৈকট্য লাভ। পবিত্র ঈদুল আযহার কোরবানি আমাদেরকে স্মরন করিয়ে দেয় হজরত ইব্রাহিম (আঃ) এর আত্মত্যাগের কথা। যিনি আল্লাহর নির্দেশে তার প্রিয় পুত্র ইসমাইল (আঃ) কে কোরবানি দেওয়ার প্রস্তুতি নেন। সেই ত্যাগের আদর্শেই আজ আমরা আমাদের প্রিয় পশুগুলো কোরবানি করে মহান আল্লাহর নৈকট্য লাভের আশা করি। যার মূল উদ্দেশ্য আল্লাহর প্রতি আনুগত্য ও আত্মনিয়ন্ত্রণের প্রমান দেওয়া। আল্লাহর নৈকট্য লাভের উদ্দেশ্যে করা কোরবানির মাধ্যমে সমাজের ধনি- গরীবের মাঝে এক অভিন্ন সেতুবন্ধন তৈরি হয়। যা সমাজের সবার সুখ শান্তি বজায় রাখতে অন্যতম প্রধান ভূমিকা পালন করে। তাই আমাদের ঈদকে শুধুই হাসি-খুশির মাঝে না কাটিয়ে আত্মশুদ্ধি ও আত্মত্যাগের মাধ্যমে আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের পাশাপাশি সামাজিক দায়িত্ব পালনের উপলক্ষ হিসেবে গ্রহন করা উচিত।----ঈদ সামাজিক বন্ধনের ভিত্তি- আলাওল করিম ফয়সালশিক্ষার্থী, মার্কেটিং বিভাগ।ঈদ উল আযহা মুসলমানদের জন্য একটি পবিত্র ধর্মীয় উৎসব, যেটি ত্যাগ ও আত্মসমর্পণের মহৎ শিক্ষা দেয়। এই ঈদের মূল বার্তা হচ্ছে আল্লাহর প্রতি সম্পূর্ণ আনুগত্য এবং প্রয়োজন হলে নিজের সবচেয়ে প্রিয় জিনিসটিও ত্যাগ করার প্রস্তুতি। হযরত ইব্রাহিম (আ.) তাঁর প্রিয় পুত্র ইসমাইল (আ.)-কে আল্লাহর আদেশে কোরবানি দিতে প্রস্তুত হয়েছিলেন। এই ঘটনাই আমাদের শেখায়, আল্লাহর নির্দেশ মান্য করাই সবচেয়ে বড় দায়িত্ব।আমার ঈদ ভাবনায় ঈদ উল আযহা শুধু কোরবানি নয়, এটি এক বিশাল সামাজিক বন্ধন এবং সহানুভূতির উৎসব। আমরা কোরবানির মাংস তিন ভাগ করে আত্মীয়-স্বজন ও গরিবদের মাঝে বণ্টন করি, যাতে সবাই ঈদের আনন্দ উপভোগ করতে পারে। নামাজ শেষে আত্মীয়দের সাথে দেখা করা, গরিবদের পাশে দাঁড়ানো, এবং পারস্পরিক ভালোবাসা বিনিময়, সব মিলিয়ে এই ঈদ এক অনন্য শিক্ষা দেয়। একজন শিক্ষার্থী হিসেবে আমি বিশ্বাস করি, ঈদ উল আযহার মূল শিক্ষা হলো নিজের ইচ্ছাকে আল্লাহর ইচ্ছার কাছে সমর্পণ করা এবং সমাজের সকল স্তরের মানুষের প্রতি সহানুভূতিশীল হওয়া।----ঈদ মানে দায়িত্ব ও হৃদয়ের সংযোগ - দেবদূত কর তীর্থশিক্ষার্থী, ব্যবস্থাপনা বিভাগ। ঈদ মানেই আনন্দ, তবু প্রতিটি মানুষের কাছে এই আনন্দের আঙ্গিক ভিন্ন। বিশেষ করে যারা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে সাংবাদিকতা করেন, তাদের ঈদুল আযহা শুধু ছুটি নয়, বরং কিছুটা ভিন্ন ধরনের উপলক্ষ্যও বটে। জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস সাংবাদিকদের কাছে ঈদুল আযহা মানে মনোরঞ্জনের পাশাপাশি মানসিক বিশ্রাম, পরিবারের কাছে ফিরে কাটানো সময় এবং নিজেকে নতুনভাবে সাজিয়ে তোলার সুযোগ। ক্লাস, এসাইনমেন্ট, রিপোর্টিং, এই ত্রিদণ্ডে আটকে থাকার ফাঁকেই তারা ঈদের ছুটিতে বাড়ি ফিরে চলে যান। কিন্তু যাওয়ার আগে সাংবাদিক ফোরামের সদস্যরা ক্যাম্পাসের জন্য একটি বিশেষ সংখ্যা প্রকাশ করেন বা ভিডিও রিপোর্ট তৈরি করেন, যাতে সবাই একসাথে ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় করতে পারে। তবে সবাই যে ক্যাম্পাস ছাড়ে, তা নয়। কেউ কেউ ঈদের ভোরেই ক্যামেরা হাতে মসজিদে ঈদের জামাতের দৃশ্য, গরু কোরবানির ফাঁকফোকর কিংবা শিশুশিশুদের হাসি-বিলাস তুলে ধরেন, যা তাদের কাঁধে আরও একটুখানি দায়িত্ব যোগ করে। অনেকে ঈদকে তাদের দক্ষতা উন্নতির প্ল্যাটফর্ম হিসেবে ব্যবহার করেন: কেউ ব্লগ লিখে ঈদের অভিজ্ঞতা শেয়ার করেন, কেউ ভিডিওর মাধ্যমে ঈদের বিশেষ মুহূর্ত সংরক্ষণ করেন। এভাবে তাদের ক্যাম্পাস সাংবাদিকতার যাত্রা আরও গভীর হয়। ঈদুল আযহা শুধু পশু কোরবানির উৎসব নয়; এটি আত্মত্যাগ, সহানুভূতি ও ভালোবাসার শিক্ষা দেয়। নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস সাংবাদিকেরা নিজ নিজ আয়নায় এই ঈদকে ধারণ করেন কখনো কলমে, কখনো ক্যামেরায়। তাদের চোখে ঈদ মানে দায়িত্ব, ত্যাগ আর হৃদয়ের ঘনিষ্ঠ সংযোগ।----ঈদ হোক আন্তরিক, নির্ভেজাল আনন্দের- মো. ইউসুফ আলী,শিক্ষার্থী, সমাজবিজ্ঞান বিভাগ।ঈদ মানেই ক্যাম্পাস ছুটিতে গ্রামে পরিবারের সঙ্গে আনন্দ উৎসবে মেতে ওঠা। পড়ালেখা, টিউশনি ও নানান কর্মব্যস্ততা থেকে অবসর দেয় ঈদের ছুটি। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের মোড়কে বেষ্টিত গ্রামের নানা চিত্র মনকে সতেজ এবং প্রফুল্ল করে তোলে। মনের মধ্যে সর্বদায় ভালোলাগা অনুভূত হয়। চাঁদরাতে বন্ধুদের সঙ্গে হৈ-হুল্লোড় করা, পটকা ফাটিয়ে মহল্লাকে মাতিয়ে রাখা। খুব ভোরে উঠে গোসল করে নতুন পাঞ্জাবি পড়ে ঈদের নামাজ পড়তে যাওয়া। ঈদের নামাজ শেষে বন্ধুদের বাসায় নাস্তা খাওয়া, বিকেলে দলবেঁধে ঘুরতে যাওয়া ও ঈদ পরবর্তী পুনর্মিলনীর পরিকল্পনা করা। ঈদ বলতে আমরা সাধারণত এটাই বুঝি। তবে, বর্তমান আধুনিক বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে চলতে চলতে প্রযুক্তির মোড়কে আমরা নিজেদের আটকে রেখেছি অনেকটাই ৷ ঈদের আনন্দটা এখন আর আগের মত নেই। ঈদ উদযাপনের ধরনটাও এখন পরিবর্তন হয়েছে। যত বড় হচ্ছি দিনদিন বন্ধুদের সংখ্যা কমছে, ঈদ উদযাপনের আগ্রহ শেষ হয়ে যাচ্ছে অনেকটাই। নতুন প্রজন্মও এখন আর আড়ম্বর পূর্ণভাবে ঈদ উদযাপন করে না। তাদের ঈদ উদযাপনও এখন অনলাইন কেন্দ্রিক হয়ে গেছে। কেউ এখন ঘুরতেও বের হয় না, বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডায় মেতেও ঈদ আনন্দ উপভোগ করে না। অনলাইনেই সকলের খোঁজ খবর নেওয়াতেই অনেকটা সীমাবদ্ধ বর্তমান তরুণদের ঈদ আনন্দ।ঈদের প্রাণবন্ত চিত্রটিকে আগের মতো করে ফিরিয়ে আনতে হলে প্রয়োজন আন্তরিকতা, সময় দেওয়া আর বাস্তব যোগাযোগকে গুরুত্ব দেওয়া। তাহলে হয়তো আবারো ঈদ হবে আনন্দের, মিলনের এবং নির্ভেজাল ভালোবাসার প্রতীক।----ত্যাগ ও ঐক্যের উৎসব ঈদ উল আজহা- মুসতারিন রহমান স্নিগ্ধা,শিক্ষার্থী, ফোকলোর বিভাগ।মুসলিম সম্প্রদায়ের অন্যতম পবিত্র উৎসব ঈদ উল আজহা। শুধু ধর্মীয় আনুষ্ঠানিকতার নাম নয়, বরং এটি ত্যাগ, ভালোবাসা, আর মানবতার এক গভীর বার্তা বহন করে। প্রতি বছর জিলহজ মাসের দশম দিনে পালিত এই উৎসব হযরত ইব্রাহিম (আ.)-এর আল্লাহর প্রতি অটল ভক্তি ও তাঁর অপরিমেয় ত্যাগের স্মৃতি নিয়ে আসে। তিনি আল্লাহর নির্দেশে নিজের প্রিয় পুত্র হযরত ইসমাইল (আ.)-কে কোরবানি করতে প্রস্তুত হয়েছিলেন, এই ঘটনা ইদ উল আজহার মূল প্রেরণা। কিন্তু এই উৎসব কেবল কোরবানির মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়; এটি আমাদের শেখায় কীভাবে নিজের স্বার্থ ত্যাগ করে সমাজের কল্যাণে এগিয়ে আসতে হয়।ইদ উল আজহার সকাল শুরু হয় ঈদগাহে নামাজের মাধ্যমে। মসজিদ ও মাঠে মানুষের ঢল, ঈদের খুৎবা, আর পরস্পরের সঙ্গে কোলাকুলি, এসব মিলে এক অপূর্ব ঐক্যের ছবি আঁকে। এরপর কোরবানির মাধ্যমে ধনী-দরিদ্রের মধ্যে দূরত্ব কমে আসে। কোরবানির মাংস তিন ভাগে ভাগ করে নিজের পরিবার, আত্মীয়-স্বজন ও অসহায়দের মাঝে বিতরণের নিয়ম শুধু ধর্মীয় রীতি নয়, এটি সামাজিক সমতার এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। এই ভাগাভাগি আমাদের মনে করিয়ে দেয়, সম্পদের সুষম বণ্টনই সমাজের শান্তি ও সমৃদ্ধির চাবিকাঠি।আজকের দ্রুতগতির বিশ্বে ইদ উল আজহার তাৎপর্য আরও গভীর। এটি আমাদের থামতে এবং ভাবতে বাধ্য করে আমরা কতটা প্রস্তুত ত্যাগ করতে? কতটা ইচ্ছুক আমরা অপরের জন্য এগিয়ে আসতে? শহরের ঝকঝকে আলোর মাঝে বা গ্রামের সহজ-সরল জীবনে, ইদ উল আজহা একই বার্তা ছড়ায় মানুষ মানুষের জন্য। এই উৎসব শিশুদের মুখে হাসি, পরিবারের মিলন, আর সম্প্রদায়ের ঐক্যের মাধ্যমে জীবনকে নতুন অর্থে ভরিয়ে তোলে। ----ঈদ হোক কল্যাণময়- মোছা. মাহমুদা আক্তার নাঈমাশিক্ষার্থী, সমাজবিজ্ঞান বিভাগ।ঈদ মানে আনন্দ, ঈদ মানে খুশি। আর এই আনন্দটা তখনই সত্যিকার অর্থে বেড়ে যায়, যখন পরিবার-পরিজন নিয়ে উদযাপন করা হয়। ক্যাম্পাস জীবনের একঘেয়েমি দৌড়-প্রতিযোগিতায় সবকিছু থেকে ব্রেক নেওয়ার জন্য তেমন সময় হয়ে ওঠে না। বাৎসরিক যে ছুটিগুলো পাওয়া যায়, সেগুলোর মধ্যে ঈদ অন্যতম। আর ঈদ-উল-আজহাকে ঘিরে আয়োজনও ভিন্নতর হয়। আগের মাস থেকেই বাড়ি যাওয়ার জন্য দিন গোনা শুরু হয়ে যায়। ছুটির ঘোষণা হওয়ার আগেই ব্যাগ গুছিয়ে রাখা, ট্রেন-বাসের টিকিট কেনার তাড়া, সিনিয়রদের দেখলেই সালামি চাওয়া, টাকা বাঁচিয়ে পরিবারের সদস্যদের জন্য কিছু না কিছু কেনা, ‘একসাথে রওনা দিব’ বন্ধুদের সাথে এমন চুক্তি করা, পড়া হবে না জেনেও সঙ্গে এক ডজন বই নেওয়া, ভোর রাতেই ক্যাম্পাস ছাড়া, স্টেশনে ধোঁয়া ওঠা চায়ের কাপ হাতে ট্রেনের অপেক্ষা করা, দূরপাল্লার রাস্তায় বাবার ‘আর কত দূর?’ প্রশ্নের জবাব দেওয়া, ‘স্বপ্ন যাবে বাড়ি আমার’ বন্ধুদের সাথে সমস্বরে গাইতে গাইতে যাওয়া। বলা যায়, এই ব্যাপারগুলো ক্যাম্পাস জীবনের সম্পর্ক ও স্মৃতিগুলোকে আরও গাঢ় করতে সাহায্য করে। বাড়ি ফিরে আবার ধুম পড়ে যায় নানা কাজের। তার উপর ঈদের কেনাকাটা, ঈদ কার্ড বানানো, মেহেদি ও ডিজাইন ঠিক করা, এই সবকিছুর ভিড়ে গরু-ছাগলের হাটে চক্কর দেওয়ার সময় বের করা, চাঁদরাতে কাজিনদের নিয়ে ছাদে চাঁদ দেখা, সঙ্গে ক্লাসের কম্বাইন্ড মেসেঞ্জার গ্রুপে শুভেচ্ছা বার্তা বিনিময়, এক কথায়, অ্যাসাইনমেন্টের ফটোকপি করা সাদা-কালো জীবনে যেন নতুন করে প্রাণ সঞ্চার হয়। মূলত উৎসবগুলো আমাদের শেকড়কে চিনিয়ে দেয়। বছরজুড়ে বাড়ি ছেড়ে একেকজন একেক জায়গায় থাকলেও, দিনশেষে ঘরমুখী হই কেবল ঈদের সময়গুলোতেই। বছরজুড়ে জমিয়ে রাখা গল্প শোনাতে ও শুনতে। আশা করছি, সবার ঈদ প্রিয়জনদের সঙ্গে সুস্থ, সুন্দর, নিরাপদ ও আনন্দে কাটবে। আত্মত্যাগের এই উৎসব সবার জন্য কল্যাণময় হোক। আশাবাদী, ছুটি শেষে কিছু মিষ্টি স্মৃতি বোঝাই করে পুনরায় মুখরিত করবে নজরুল তীর্থ।

পবিত্র ঈদ উল আজহা নিয়ে শিক্ষার্থীদের ভাবনা ও প্রত্যাশা