জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় খেলার মাঠ এখন বালু ও ধুলায় ভরা এক অনুপযোগী চত্বরে পরিণত হয়েছে। ৩ কোটি ৭০ লাখ টাকা বাজেটের সংস্কার প্রকল্পের কাজ নির্ধারিত সময়ের দ্বিগুণ সময় পেরিয়ে গেলেও মাঠে এখনো খেলার উপযুক্ত পরিবেশ তৈরি হয়নি। দীর্ঘসূত্রিতা, প্রশাসনিক উদাসীনতা এবং ঠিকাদারি গাফিলতির কারণে মাঠ সংস্কার কার্যক্রম এখন কার্যত অচল হয়ে পড়েছে।
এই মাঠটি বিশ্ববিদ্যালয়ের খেলাধুলা, শারীরিক অনুশীলন ও বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতার একমাত্র ভরসা ছিল। কিন্তু গত পাঁচ মাস ধরে মাঠজুড়ে পড়ে থাকা বালু, গর্ত আর অর্ধসমাপ্ত কাজের কারণে শিক্ষার্থীরা খেলাধুলা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। অনেকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ক্ষোভ প্রকাশ করে লিখছেন, “এটা আর খেলার মাঠ নয়, ‘বালু খেকো মাঠ’ কিংবা ‘ক্যাম্পাসের পিরামিড’।”
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, মাঠ সংস্কার, ওয়াকওয়ে নির্মাণ ও সৌন্দর্যবর্ধনের জন্য মোট ৩ কোটি ৭০ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। মাঠ সংস্কারকাজের জন্য নির্দিষ্ট কোনো উপ-খাত না থাকায় পুরো বাজেট থেকেই প্রয়োজনীয় অর্থ ব্যয় করার কথা ছিল। গত ৯ মে তিন মাস মেয়াদি পরিকল্পনা নিয়ে কাজ শুরু হলেও পাঁচ মাস পার হয়ে গেলেও মাঠ সমান করার প্রাথমিক কাজই শেষ হয়নি।
আইন ও বিচার বিভাগের শিক্ষার্থী ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ফুটবল দলের নিয়মিত খেলোয়াড় সানোয়ার রাব্বি প্রমিজ বলেন, “মাঠের বিষয়টি এখন আমাদের কাছে এক রকম যন্ত্রণার হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রশাসন, প্রকৌশল দপ্তর ও ঠিকাদারকে বারবার অনুরোধ করার পরও কাজের তেমন কোনো অগ্রগতি নেই। আমরা আন্দোলন করলে কাজ শুরু হয়, আবার ধীরে ধীরে থেমে যায়। গত পাঁচ মাসেও শুধু বালু ফেলাই শেষ হয়নি।”
বিশ্ববিদ্যালয়ের শারীরিক শিক্ষা বিভাগের ভারপ্রাপ্ত অতিরিক্ত পরিচালক মো. নাজমুল হাসান ঠিকাদারকেই দায়ী করেছেন। তিনি বলেন, “আগের ঠিকাদার কাজের ধীরগতির কারণে বিল আটকে রাখা হয়েছিল। প্রায় দুই মাস আগে নতুন ঠিকাদারকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তারা দ্রুত কাজ শেষ করবে বলে জানিয়েছে।”
তবে প্রকল্প সংশ্লিষ্টদের বক্তব্যে দেখা যাচ্ছে, কাজের সময়সীমা নিয়ে বিভ্রান্তি ও অস্পষ্টতা রয়ে গেছে। প্রকল্প পরিচালক সৈয়দ মোফাসিরুল ইসলাম বলেন, “মাঠের জন্য সাদা ও লাল বালু মিশিয়ে একটি নতুন স্তর তৈরি করার পরিকল্পনা রয়েছে। কিন্তু লাল বালু পঞ্চগড় থেকে আনতে সময় লাগছে। বালু মিক্সিং করতে দুই সপ্তাহ এবং পরে পানি দিয়ে ভেজাতে আরও দুই মাস সময় লাগবে।”
অন্যদিকে প্রকৌশল দপ্তরের উপ-প্রধান প্রকৌশলী মো. মাহবুবুল ইসলাম বলেন, “শুধু বালু মিক্সিংয়ের কাজেই এক মাস সময় লাগবে।”
প্রকৌশল দপ্তরের কর্মকর্তারা প্রথম দিকের কাজের পরিকল্পনাহীনতা ও ভুল সিদ্ধান্তের বিষয়টি স্বীকার করেছেন। উপ-প্রধান প্রকৌশলী মাহবুবুল ইসলাম জানান, “প্রথমে যে কাজগুলো করা হয়েছিল, সেগুলো বিশেষজ্ঞ মতামত ছাড়াই করা হয়। পরে দেখা যায়, ব্যবহৃত উপকরণের মান নিম্নমানের হওয়ায় ঘাস গজানোসহ নানা সমস্যা দেখা দেয়। বর্তমানে বিকেএসপির বিশেষজ্ঞদের পরামর্শে নতুন পরিকল্পনা অনুযায়ী কাজ করা হচ্ছে।”
নির্বাহী প্রকৌশলী মো. রাহাত হাসান দিদারও বলেন, “প্রথম দিকে বিকেএসপির পরামর্শ নেওয়া হয়নি। যদি নেওয়া হতো, তাহলে হয়তো টাকা ও সময় দুটোই বাঁচত। শুরুতে ড্রেনের ঠিকাদারকেই মাঠের কাজ দেওয়া হয়েছিল জরুরি ভিত্তিতে।”
সংস্কারকাজের বর্তমান দায়িত্বে থাকা ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মাহবুবু এন্টারপ্রাইজের মালিক মুরাদ মাহবুবের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি। ফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করেও সাড়া মেলেনি।
বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের খেলোয়াড়রা জানান, মাঠের কাজ বন্ধ থাকায় আন্তঃবিভাগীয় টুর্নামেন্ট, বার্ষিক ক্রীড়া অনুষ্ঠানসহ নিয়মিত অনুশীলন কার্যক্রম স্থবির হয়ে পড়েছে। তারা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে দ্রুত কাজ সম্পন্ন করার দাবি জানিয়েছেন।
বিষয় : নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়

সোমবার, ০১ ডিসেম্বর ২০২৫
প্রকাশের তারিখ : ৩১ অক্টোবর ২০২৫

যুক্ত থাকুন দ্যা ঢাকা নিউজের সাথে