সোমবার, ০১ ডিসেম্বর ২০২৫
The Dhaka News Bangla

কুমিল্লার বুকে আজীবন সভাপতি রাশেদুল ইসলাম

কুমিল্লার বুকে আজীবন সভাপতি রাশেদুল ইসলাম
প্রয়াত রাশেদুল ইসলাম

ক্যাম্পাসে বিকেল কিংবা মধ্যরাতের আড্ডার আসর ভাঙতে না ভাঙতেই একসময় একটি পরিচিত কণ্ঠস্বর শোনা যেত, “কই তুই, নিচে আয়।” সেই ডাকের সঙ্গে সঙ্গেই কেউ না কেউ ছুটে নামত। হাসিমাখা মুখে পাশে দাঁড়িয়ে থাকা মানুষটা ছিলেন কুমিল্লার ছেলে রাশেদুল ইসলাম। বন্ধুদের কাছে তিনি ছিলেন ভাইয়ের মতো, আবার ভাইয়ের চেয়েও কাছের বন্ধু। সেই প্রাণখোলা হাসি, সহজ ভঙ্গি আর অকৃত্রিম মমতায় ভরা মানুষটির কণ্ঠস্বর আর ক্যাম্পাসে শোনা যাবে না। বজ্রাঘাত অকালে কেড়ে নিয়েছে তাঁর জীবন।

৫ অক্টোবর ২০২৫, দুপুরে কুমিল্লায় নিজ এলাকায় বজ্রপাতে ঝরে গেল এই তরুণ প্রাণ। মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়তেই বিশ্ববিদ্যালয়জুড়ে নেমে আসে শোকের ছায়া। সহপাঠী, শিক্ষক আর সংগঠনের সদস্যরা যেন বিশ্বাসই করতে পারছিলেন না, যার সঙ্গে কিছুক্ষণ আগেও কথা হয়েছে, যিনি একদিন আগে পর্যন্ত পরিকল্পনা করেছেন সংগঠনের নতুন কোনো আয়োজন, তিনি আর নেই।

ফিল্ম অ্যান্ড মিডিয়া স্টাডিজ বিভাগের শিক্ষার্থী মো. রাশেদুল ইসলাম ছিলেন কুমিল্লা এসোসিয়েশনের সভাপতি। তবে পদবির আড়াল থেকে নয়, বরং প্রাণের টানে তিনি সংগঠনের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। ছাত্রজীবনের ছোটখাটো সমস্যার সমাধান থেকে শুরু করে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আয়োজন, সব জায়গায় তাঁর সক্রিয় উপস্থিতি ছিল। যারা নতুন এসেছিল বিশ্ববিদ্যালয়ে, তারা খুব দ্রুত তাঁকে নিজেদের বড় ভাই হিসেবে চিনে নিয়েছিল। সবার দুঃখ-কষ্ট ভাগ করে নিতেন, আবার আনন্দেও পাশে দাঁড়াতেন সমান তালে।

তাঁকে নিয়ে সহপাঠীদের স্মৃতিচারণগুলো ভেসে বেড়াচ্ছে ক্যাম্পাসে। কেউ বলছে, নিজের কোনো ভাই ছিল না, কিন্তু রাশেদুল ছিলেন ভাইয়ের চেয়েও বেশি কাছের। কেউ আবার বলছে, বিশ্ববিদ্যালয় জীবন যতটা আনন্দময় হয়েছে, তার বড় অংশটুকুই সম্ভব হয়েছিল তাঁর কারণে। আড্ডা, পরিকল্পনা, কিংবা নিছক গল্প, সবকিছুর মধ্যেই ছিল তাঁর প্রাণশক্তি। আজ সে জায়গাটা হঠাৎ ফাঁকা হয়ে গেছে।


কুমিল্লা এসোসিয়েশনের সদস্যদের কাছে রাশেদ শুধু সভাপতি নন, ছিলেন সংগঠনের প্রাণ। তাঁর নিষ্ঠা আর আত্মত্যাগে সংগঠনটি পেয়েছিল নতুন গতি। তিনি ছিলেন সেই কেন্দ্রবিন্দু, যেখানে এসে মিলত সবার স্বপ্ন আর প্রত্যাশা।

অকালমৃত্যুর এই আঘাতে শোকাহত সংগঠনের সদস্যরা এক অভূতপূর্ব সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। ভবিষ্যতে আর কাউকে সভাপতি করা হবে না। পদটি চিরদিনের জন্য উৎসর্গ করা হলো রাশেদুল ইসলামের নামে। যেন তিনি থেকে যাবেন প্রতিটি কার্যক্রমে, প্রতিটি সিদ্ধান্তে, প্রতিটি নতুন সদস্যের হৃদয়ে। তাঁর অনুপস্থিতিতেও যেন তিনি থেকে যান সংগঠনের প্রতিটি পদক্ষেপে।

শিক্ষার্থীরা বলছে, তাঁর প্রস্থানে যে শূন্যতা তৈরি হলো, তা পূরণ হওয়ার নয়। তবে তাঁর রেখে যাওয়া স্মৃতি আর অনুপ্রেরণা তাদের পথ দেখাবে। হাসি-ঠাট্টায় ভরা সেই দিনগুলো আজ বেদনার হলেও, সবার বিশ্বাস, সকলের রাশেদ ভাই হয়তো দূরে কোথাও থেকেও তাদের পাশে আছেন, দেখছেন, শক্তি জোগাচ্ছেন।

জীবনের খুব অল্প সময়েই তিনি যেভাবে সবার মন জয় করেছিলেন, তা তাকে অন্যরকম উচ্চতায় পৌঁছে দিয়েছে। মৃত্যুর পরও তিনি বেঁচে আছেন সহপাঠীদের স্মৃতিতে, সংগঠনের প্রতিটি ধাপে। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা বলছেন, রাশেদুল হয়ে উঠেছেন সবার প্রেরণার প্রতীক।

আজ ক্যাম্পাসের আড্ডার আসরে আর তাঁর হাসি ভেসে আসে না, মেসেঞ্জারে আসে না কোনো ডাক “কই তুই, নিচে আয়।” কিন্তু তাঁর অনুপস্থিতি যেন আরও গভীর করে তুলছে উপস্থিতিকে। কুমিল্লা এসোসিয়েশন, জাককানইবি যতদিন থাকবে, ততদিনই সভাপতি হয়ে থাকবেন রাশেদুল ইসলাম, আজীবন, অনন্তকাল আমাদের ‘রাশেদ ভাই’ হয়ে।

বিষয় : নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়

যুক্ত থাকুন দ্যা ঢাকা নিউজের সাথে

The Dhaka News Bangla

সোমবার, ০১ ডিসেম্বর ২০২৫


কুমিল্লার বুকে আজীবন সভাপতি রাশেদুল ইসলাম

প্রকাশের তারিখ : ০৭ অক্টোবর ২০২৫

featured Image
ক্যাম্পাসে বিকেল কিংবা মধ্যরাতের আড্ডার আসর ভাঙতে না ভাঙতেই একসময় একটি পরিচিত কণ্ঠস্বর শোনা যেত, “কই তুই, নিচে আয়।” সেই ডাকের সঙ্গে সঙ্গেই কেউ না কেউ ছুটে নামত। হাসিমাখা মুখে পাশে দাঁড়িয়ে থাকা মানুষটা ছিলেন কুমিল্লার ছেলে রাশেদুল ইসলাম। বন্ধুদের কাছে তিনি ছিলেন ভাইয়ের মতো, আবার ভাইয়ের চেয়েও কাছের বন্ধু। সেই প্রাণখোলা হাসি, সহজ ভঙ্গি আর অকৃত্রিম মমতায় ভরা মানুষটির কণ্ঠস্বর আর ক্যাম্পাসে শোনা যাবে না। বজ্রাঘাত অকালে কেড়ে নিয়েছে তাঁর জীবন।৫ অক্টোবর ২০২৫, দুপুরে কুমিল্লায় নিজ এলাকায় বজ্রপাতে ঝরে গেল এই তরুণ প্রাণ। মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়তেই বিশ্ববিদ্যালয়জুড়ে নেমে আসে শোকের ছায়া। সহপাঠী, শিক্ষক আর সংগঠনের সদস্যরা যেন বিশ্বাসই করতে পারছিলেন না, যার সঙ্গে কিছুক্ষণ আগেও কথা হয়েছে, যিনি একদিন আগে পর্যন্ত পরিকল্পনা করেছেন সংগঠনের নতুন কোনো আয়োজন, তিনি আর নেই।ফিল্ম অ্যান্ড মিডিয়া স্টাডিজ বিভাগের শিক্ষার্থী মো. রাশেদুল ইসলাম ছিলেন কুমিল্লা এসোসিয়েশনের সভাপতি। তবে পদবির আড়াল থেকে নয়, বরং প্রাণের টানে তিনি সংগঠনের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। ছাত্রজীবনের ছোটখাটো সমস্যার সমাধান থেকে শুরু করে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আয়োজন, সব জায়গায় তাঁর সক্রিয় উপস্থিতি ছিল। যারা নতুন এসেছিল বিশ্ববিদ্যালয়ে, তারা খুব দ্রুত তাঁকে নিজেদের বড় ভাই হিসেবে চিনে নিয়েছিল। সবার দুঃখ-কষ্ট ভাগ করে নিতেন, আবার আনন্দেও পাশে দাঁড়াতেন সমান তালে।তাঁকে নিয়ে সহপাঠীদের স্মৃতিচারণগুলো ভেসে বেড়াচ্ছে ক্যাম্পাসে। কেউ বলছে, নিজের কোনো ভাই ছিল না, কিন্তু রাশেদুল ছিলেন ভাইয়ের চেয়েও বেশি কাছের। কেউ আবার বলছে, বিশ্ববিদ্যালয় জীবন যতটা আনন্দময় হয়েছে, তার বড় অংশটুকুই সম্ভব হয়েছিল তাঁর কারণে। আড্ডা, পরিকল্পনা, কিংবা নিছক গল্প, সবকিছুর মধ্যেই ছিল তাঁর প্রাণশক্তি। আজ সে জায়গাটা হঠাৎ ফাঁকা হয়ে গেছে।কুমিল্লা এসোসিয়েশনের সদস্যদের কাছে রাশেদ শুধু সভাপতি নন, ছিলেন সংগঠনের প্রাণ। তাঁর নিষ্ঠা আর আত্মত্যাগে সংগঠনটি পেয়েছিল নতুন গতি। তিনি ছিলেন সেই কেন্দ্রবিন্দু, যেখানে এসে মিলত সবার স্বপ্ন আর প্রত্যাশা।অকালমৃত্যুর এই আঘাতে শোকাহত সংগঠনের সদস্যরা এক অভূতপূর্ব সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। ভবিষ্যতে আর কাউকে সভাপতি করা হবে না। পদটি চিরদিনের জন্য উৎসর্গ করা হলো রাশেদুল ইসলামের নামে। যেন তিনি থেকে যাবেন প্রতিটি কার্যক্রমে, প্রতিটি সিদ্ধান্তে, প্রতিটি নতুন সদস্যের হৃদয়ে। তাঁর অনুপস্থিতিতেও যেন তিনি থেকে যান সংগঠনের প্রতিটি পদক্ষেপে।শিক্ষার্থীরা বলছে, তাঁর প্রস্থানে যে শূন্যতা তৈরি হলো, তা পূরণ হওয়ার নয়। তবে তাঁর রেখে যাওয়া স্মৃতি আর অনুপ্রেরণা তাদের পথ দেখাবে। হাসি-ঠাট্টায় ভরা সেই দিনগুলো আজ বেদনার হলেও, সবার বিশ্বাস, সকলের রাশেদ ভাই হয়তো দূরে কোথাও থেকেও তাদের পাশে আছেন, দেখছেন, শক্তি জোগাচ্ছেন।জীবনের খুব অল্প সময়েই তিনি যেভাবে সবার মন জয় করেছিলেন, তা তাকে অন্যরকম উচ্চতায় পৌঁছে দিয়েছে। মৃত্যুর পরও তিনি বেঁচে আছেন সহপাঠীদের স্মৃতিতে, সংগঠনের প্রতিটি ধাপে। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা বলছেন, রাশেদুল হয়ে উঠেছেন সবার প্রেরণার প্রতীক।আজ ক্যাম্পাসের আড্ডার আসরে আর তাঁর হাসি ভেসে আসে না, মেসেঞ্জারে আসে না কোনো ডাক “কই তুই, নিচে আয়।” কিন্তু তাঁর অনুপস্থিতি যেন আরও গভীর করে তুলছে উপস্থিতিকে। কুমিল্লা এসোসিয়েশন, জাককানইবি যতদিন থাকবে, ততদিনই সভাপতি হয়ে থাকবেন রাশেদুল ইসলাম, আজীবন, অনন্তকাল আমাদের ‘রাশেদ ভাই’ হয়ে।

The Dhaka News Bangla

সম্পাদক: তাসকিন আহমেদ রিয়াদ 

কপিরাইট © ২০২৫ The Dhaka News Bangla । সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত