
নেপালের রাজধানী কাঠমান্ডুতে দুর্নীতির অবসান এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সরকারের নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের দাবিতে হাজারো তরুণ বিক্ষোভ করেছেন। সোমবার (৮ সেপ্টেম্বর) অনুষ্ঠিত এই কর্মসূচিতে বিভিন্ন শিক্ষার্থী ও তরুণ প্রজন্মের সদস্যরা অংশ নেন। এ সময় পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে অন্তত ৬ জন নিহত এবং ৪২ জনের বেশি আহত হওয়ার খবর দিয়েছে বার্তাসংস্থা রয়টার্স।
সরকার সম্প্রতি ২৬টি অনিবন্ধিত প্ল্যাটফর্ম বন্ধ করে দিয়েছে। এর ফলে ফেসবুক, ইউটিউব ও এক্স (টুইটার) ব্যবহার করা যাচ্ছে না। এতে নেপালের কোটি কোটি ব্যবহারকারী ক্ষুব্ধ হয়ে পড়েছেন। বিশেষ করে ইনস্টাগ্রাম ও ইউটিউবের মতো প্ল্যাটফর্মে বিনোদন, সংবাদ ও ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত ব্যবহারকারীরা ক্ষতির মুখে পড়েছেন।
জাতীয় পতাকা হাতে নিয়ে বিক্ষোভকারীরা জাতীয় সংগীত গেয়ে প্রতিবাদ শুরু করেন। পরে তারা দুর্নীতির বিরুদ্ধে ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের দাবিতে স্লোগান দেন।
২৪ বছর বয়সী ছাত্রী যুজন রাজভান্ডারী বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞার কারণে আমরা উদ্বিগ্ন। তবে মূলত আমরা নেপালে প্রাতিষ্ঠানিক দুর্নীতির বিরুদ্ধেই লড়ছি।’
২০ বছর বয়সী ছাত্রী ইক্ষমা তুমরোক বলেন, ‘আমরা সরকারের কর্তৃত্ববাদী মনোভাব মেনে নেব না। পরিবর্তনের সূচনা আমাদের প্রজন্ম থেকেই হবে।’
বিক্ষোভকারীরা অভিযোগ করছেন যে, সাধারণ মানুষের দৈনন্দিন সংগ্রামের বিপরীতে রাজনীতিবিদদের সন্তানরা বিলাসবহুল জীবনযাপন করছেন। এমন একটি তুলনামূলক ভিডিও টিকটকে ভাইরাল হয়ে প্রতিবাদকে আরও উসকে দিয়েছে।
মানববন্ধনে অংশ নেওয়া ভূমিকা ভারতী বলেন, ‘দুর্নীতির বিরুদ্ধে বিদেশে আন্দোলন হয়েছে। এখানেও তা হতে পারে বলে সরকার ভয় পাচ্ছে।’
এর আগে গত মাসে নেপালের মন্ত্রিসভা সিদ্ধান্ত নেয়—সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম কোম্পানিগুলোকে দেশটিতে সাত দিনের মধ্যে নিবন্ধন করতে হবে এবং প্রতিনিধি নিয়োগ দিতে হবে। সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশনার পর সরকার এ সিদ্ধান্ত নেয়।
মূলত জেনারেশন জেড প্রজন্মের নেতৃত্বে এই বিক্ষোভ অনুষ্ঠিত হয়। বিক্ষোভকারীরা শুধু সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম বন্ধের প্রতিবাদই নয়, বরং দীর্ঘদিন ধরে চলে আসা দুর্নীতি সংস্কৃতির বিরুদ্ধেও ক্ষোভ প্রকাশ করেন।
সকাল ৯টা থেকে বিক্ষোভকারীরা কাঠমান্ডুর মৈতিঘর এলাকায় জড়ো হতে শুরু করেন। সরকার অনিবন্ধিত প্ল্যাটফর্মগুলো বন্ধ করার পর বিক্ষোভ আরও ছড়িয়ে পড়ে।
কাঠমান্ডু জেলা প্রশাসন জানায়, ‘হামি নেপাল’ নামে একটি সংগঠন অনুমতি নিয়ে এই সমাবেশ আয়োজন করে।
বিক্ষোভকারীরা হাতে প্ল্যাকার্ড নিয়ে শ্লোগান দেন— ‘সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম নয়’, ‘দুর্নীতি বন্ধ করো’, ‘সোশ্যাল মিডিয়া চালু করো’, ‘যুবসমাজ দুর্নীতির বিরুদ্ধে’। বিক্ষোভ মিছিল কাঠমান্ডুর বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে সংসদ ভবনের দিকে অগ্রসর হয়।
আন্তর্জাতিক সংবাদ সংস্থা রয়টার্স জানায়, বিক্ষোভ থেকে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওগুলোতে দেখা গেছে, তরুণরা জাতীয় পতাকা হাতে জাতীয় সঙ্গীত গেয়ে মিছিল করছেন।
মঙ্গলবার, ০৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫
প্রকাশের তারিখ : ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫
যুক্ত থাকুন দ্যা ঢাকা নিউজের সাথে