সোমবার, ২৮ জুলাই ২০২৫
The Dhaka News Bangla

শিক্ষার্থী বাড়লেও, শিক্ষক সংকটে নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়

শিক্ষার্থী বাড়লেও, শিক্ষক সংকটে নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়
জাককানইবি

প্রতিষ্ঠার দেড় যুগেও শিক্ষক সংকট কাটেনি জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ে। প্রতিবছর নতুন নতুন বিভাগ ও শিক্ষার্থীর সংখ্যা বাড়লেও, বাড়েনি শিক্ষক। ফলে প্রয়োজনীয় সংখ্যার তুলনায় অর্ধেকেরও কম শিক্ষক কর্মরত থাকায় ব্যাহত হচ্ছে পাঠদান ও একাডেমিক কার্যক্রম। এতে শিক্ষার্থীদের মধ্যে তৈরি হয়েছে সেশনজটসহ নানা সমস্যা।

বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০২৫ সালের বার্ষিক প্রকাশনা অনুযায়ী, বর্তমানে এখানে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পর্যায়ে ১০ হাজার ৮০৯ জন শিক্ষার্থী অধ্যয়নরত। উচ্চশিক্ষার মানদণ্ড অনুযায়ী, প্রতি ২০ জন শিক্ষার্থীর জন্য একজন শিক্ষক থাকা প্রয়োজন। সে হিসাবে এখানে প্রয়োজন অন্তত ৫৪০ জন পূর্ণকালীন শিক্ষক। কিন্তু বাস্তবে কর্মরত আছেন মাত্র ২২০ জন। এর মধ্যে অনেকে রয়েছেন শিক্ষাছুটিতে, ফলে কার্যত সক্রিয় শিক্ষকসংখ্যা আরও কম।

বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) দেশের সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে আউটকাম বেইজড এডুকেশন (ওবিই) বাস্তবায়নের উদ্যোগ নিয়েছে। এই পদ্ধতি কার্যকর করতে হলে প্রতিটি বিভাগে কমপক্ষে ৩০ থেকে ৩২ জন শিক্ষক থাকা প্রয়োজন। থিসিস বা গবেষণা কার্যক্রম না থাকলেও, সিলেবাস অনুযায়ী পাঠদান নিশ্চিত করতে কমপক্ষে ১৫ থেকে ১৬ জন শিক্ষক প্রয়োজন হয়।

কিন্তু নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ের ২৪টি বিভাগের বেশির ভাগেই শিক্ষকসংখ্যা পাঁচের নিচে। ইতিহাস, সমাজবিজ্ঞান, দর্শন, পপুলেশন সায়েন্স, পরিসংখ্যান, মার্কেটিং ও নৃবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক সংখ্যা সর্বোচ্চ তিন থেকে চারজন। অধিকাংশ শিক্ষক একাধিক কোর্স নেওয়ার পাশাপাশি প্রশাসনিক কাজেও যুক্ত থাকেন। এতে পাঠদানের মান যেমন কমে যাচ্ছে, তেমনি সেশনজটের শংকাও বাড়ছে।

সমাজবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী মো. ইউসুফ বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরে নিয়মিত ক্লাস-পরীক্ষা হচ্ছে না। এতে পড়াশোনা সহ অনেক ক্ষেত্রে পিছিয়ে পড়ছি আমরা। বিভাগে অভিযোগ জানালে তারা বলেন, শিক্ষক সংকট। যারা আছেন তারা বিভিন্ন থিসিস, গবেষণা নিয়ে ব্যস্ত আছেন।’

মার্কেটিং বিভাগের শিক্ষার্থী আল মামুন বলেন, ‘অপর্যাপ্ত শিক্ষকের কারণে বিভিন্ন কোর্সের প্রয়োজনীয় সংখ্যক ক্লাস নেয়া হয় না। এছাড়াও শিক্ষকরা রুটিনমাফিক ক্লাস নিতে পারেন না।’ 

পপুলেশন সায়েন্স বিভাগের স্নাতকোত্তরের আরেক শিক্ষার্থী বলেন, ‘আমাদের বিভাগে শিক্ষক আছেন মাত্র তিনজন। তাঁরা একাধিক কোর্স পড়ান। ক্লাস নিয়মিত হয় না। অনেক সময় পরীক্ষা হয় বিলম্বে। কোর্স শেষ না করেই পরীক্ষা দিতে হয়। এতে আমরা মানসম্পন্ন শিক্ষা পাচ্ছি না।’

এ বিষয়ে ইতিহাস বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ড. মুহাম্মদ শামসুজ্জামান জানান, ‘একজন শিক্ষককে ক্লাস নেওয়া, খাতা দেখা, প্রশ্ন তৈরি, গবেষণা, প্রশাসনিক মিটিংসহ একাধিক দায়িত্ব পালন করতে হয়। পর্যাপ্ত শিক্ষক না থাকলে পাঠদান ব্যাহত হয়, একই সঙ্গে ইউজিসি নির্দেশিত ওবিই বাস্তবায়নও কঠিন হয়ে পড়ে।’

বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য মো. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘কয়েকটি বিভাগে শিক্ষকসংকট রয়েছে। বিষয়টি ইউজিসিকে জানানো হয়েছে। তাঁরা আশ্বাস দিয়েছেন, নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ের বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করবেন।’

বিষয় : নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়

যুক্ত থাকুন দ্যা ঢাকা নিউজের সাথে

The Dhaka News Bangla

সোমবার, ২৮ জুলাই ২০২৫


শিক্ষার্থী বাড়লেও, শিক্ষক সংকটে নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়

প্রকাশের তারিখ : ২৭ জুলাই ২০২৫

featured Image
প্রতিষ্ঠার দেড় যুগেও শিক্ষক সংকট কাটেনি জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ে। প্রতিবছর নতুন নতুন বিভাগ ও শিক্ষার্থীর সংখ্যা বাড়লেও, বাড়েনি শিক্ষক। ফলে প্রয়োজনীয় সংখ্যার তুলনায় অর্ধেকেরও কম শিক্ষক কর্মরত থাকায় ব্যাহত হচ্ছে পাঠদান ও একাডেমিক কার্যক্রম। এতে শিক্ষার্থীদের মধ্যে তৈরি হয়েছে সেশনজটসহ নানা সমস্যা।বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০২৫ সালের বার্ষিক প্রকাশনা অনুযায়ী, বর্তমানে এখানে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পর্যায়ে ১০ হাজার ৮০৯ জন শিক্ষার্থী অধ্যয়নরত। উচ্চশিক্ষার মানদণ্ড অনুযায়ী, প্রতি ২০ জন শিক্ষার্থীর জন্য একজন শিক্ষক থাকা প্রয়োজন। সে হিসাবে এখানে প্রয়োজন অন্তত ৫৪০ জন পূর্ণকালীন শিক্ষক। কিন্তু বাস্তবে কর্মরত আছেন মাত্র ২২০ জন। এর মধ্যে অনেকে রয়েছেন শিক্ষাছুটিতে, ফলে কার্যত সক্রিয় শিক্ষকসংখ্যা আরও কম।বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) দেশের সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে আউটকাম বেইজড এডুকেশন (ওবিই) বাস্তবায়নের উদ্যোগ নিয়েছে। এই পদ্ধতি কার্যকর করতে হলে প্রতিটি বিভাগে কমপক্ষে ৩০ থেকে ৩২ জন শিক্ষক থাকা প্রয়োজন। থিসিস বা গবেষণা কার্যক্রম না থাকলেও, সিলেবাস অনুযায়ী পাঠদান নিশ্চিত করতে কমপক্ষে ১৫ থেকে ১৬ জন শিক্ষক প্রয়োজন হয়।কিন্তু নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ের ২৪টি বিভাগের বেশির ভাগেই শিক্ষকসংখ্যা পাঁচের নিচে। ইতিহাস, সমাজবিজ্ঞান, দর্শন, পপুলেশন সায়েন্স, পরিসংখ্যান, মার্কেটিং ও নৃবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক সংখ্যা সর্বোচ্চ তিন থেকে চারজন। অধিকাংশ শিক্ষক একাধিক কোর্স নেওয়ার পাশাপাশি প্রশাসনিক কাজেও যুক্ত থাকেন। এতে পাঠদানের মান যেমন কমে যাচ্ছে, তেমনি সেশনজটের শংকাও বাড়ছে।সমাজবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী মো. ইউসুফ বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরে নিয়মিত ক্লাস-পরীক্ষা হচ্ছে না। এতে পড়াশোনা সহ অনেক ক্ষেত্রে পিছিয়ে পড়ছি আমরা। বিভাগে অভিযোগ জানালে তারা বলেন, শিক্ষক সংকট। যারা আছেন তারা বিভিন্ন থিসিস, গবেষণা নিয়ে ব্যস্ত আছেন।’মার্কেটিং বিভাগের শিক্ষার্থী আল মামুন বলেন, ‘অপর্যাপ্ত শিক্ষকের কারণে বিভিন্ন কোর্সের প্রয়োজনীয় সংখ্যক ক্লাস নেয়া হয় না। এছাড়াও শিক্ষকরা রুটিনমাফিক ক্লাস নিতে পারেন না।’ পপুলেশন সায়েন্স বিভাগের স্নাতকোত্তরের আরেক শিক্ষার্থী বলেন, ‘আমাদের বিভাগে শিক্ষক আছেন মাত্র তিনজন। তাঁরা একাধিক কোর্স পড়ান। ক্লাস নিয়মিত হয় না। অনেক সময় পরীক্ষা হয় বিলম্বে। কোর্স শেষ না করেই পরীক্ষা দিতে হয়। এতে আমরা মানসম্পন্ন শিক্ষা পাচ্ছি না।’এ বিষয়ে ইতিহাস বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ড. মুহাম্মদ শামসুজ্জামান জানান, ‘একজন শিক্ষককে ক্লাস নেওয়া, খাতা দেখা, প্রশ্ন তৈরি, গবেষণা, প্রশাসনিক মিটিংসহ একাধিক দায়িত্ব পালন করতে হয়। পর্যাপ্ত শিক্ষক না থাকলে পাঠদান ব্যাহত হয়, একই সঙ্গে ইউজিসি নির্দেশিত ওবিই বাস্তবায়নও কঠিন হয়ে পড়ে।’বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য মো. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘কয়েকটি বিভাগে শিক্ষকসংকট রয়েছে। বিষয়টি ইউজিসিকে জানানো হয়েছে। তাঁরা আশ্বাস দিয়েছেন, নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ের বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করবেন।’

The Dhaka News Bangla


কপিরাইট © ২০২৫ The Dhaka News Bangla । সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত