রোববার, ২৭ জুলাই ২০২৫
The Dhaka News Bangla

কেন ওহি আসা বন্ধ হয়েছিল

কেন ওহি আসা বন্ধ হয়েছিল

নবীজি (সা.) চল্লিশ বছর বয়সে প্রথম ওহি লাভ করেন। তিনি মানবজাতির জন্য আল্লাহর বাণী প্রচার ও শিক্ষা দেওয়ার দায়িত্ব গ্রহণ করেন এবং এই দায়িত্ব পালনে তিনি তার সর্বোচ্চ চেষ্টা করেন।

তবে, এই ওহি গ্রহণের প্রক্রিয়া তাঁর জন্য শারীরিক ও মানসিকভাবে অত্যন্ত কঠিন ছিল।

ওহি গ্রহণের শারীরিক ও মানসিক প্রভাব

নবীজি (সা.) যখন ওহি গ্রহণ করতেন, তখন তা তাঁর উপর প্রচণ্ড চাপ সৃষ্টি করত। হাদিসে উল্লেখ আছে যে, ওহি গ্রহণের সময় তাঁর শরীরে ভারী বোঝা অনুভূত হত, যা তাঁকে ক্লান্ত ও দুর্বল করে দিত (সহিহ বুখারি, হাদিস: ২)।

এই প্রক্রিয়া শারীরিক এবং মানসিকভাবে খুবই কঠিন ছিল। একই সময়ে, তিনি মক্কার বিরোধীদের থেকে প্রবল প্রত্যাখ্যান ও বিরোধিতার সম্মুখীন হচ্ছিলেন। এই চাপের কারণে তিনি কয়েকদিন অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন এবং এমনকি রাতের তাহাজ্জুদ নামাজের জন্যও উঠতে পারেননি।

ওহির সাময়িক বিরতি

নবীজির (সা.)-এর অসুস্থতার সময় আল্লাহ তা‘আলা কয়েকদিনের জন্য ওহি প্রেরণ বন্ধ রাখেন, যাতে তিনি স্বাস্থ্য পুনরুদ্ধার করতে পারেন। এই সময়ে মক্কার একজন নারী, আবু লাহাবের স্ত্রী, তাঁকে উপহাস করে বলেন, “দেখছি, তোমার ‘শয়তান’ তোমাকে ছেড়ে চলে গেছে!” (সহিহ বুখারি, হাদিস: ৪৯৫০)।

নবী (সা.) এই উপহাসে কোনো প্রতিক্রিয়া দেখাননি, তবে ওহি না আসার কারণে তিনি গভীরভাবে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েন। তাঁর হৃদয়ে ওহি গ্রহণের জন্য তীব্র আকাঙ্ক্ষা জন্মেছিল।

সুরা দুহা: নবীজির জন্য সান্ত্বনা

এই সময়ে আল্লাহ তাআলা সুরা দুহা নাজিল করেন, যা নবীজির (সা.)-এর উদ্বেগ দূর করে এবং তাঁকে সান্ত্বনার কারণ হয়। শুরুতে আল্লাহ বলেন: “শপথ সকালের আলোর, এবং শপথ রাতের যখন তা নিস্তব্ধ হয়। তোমার প্রভু তোমাকে পরিত্যাগ করেননি এবং তিনি তোমার প্রতি বিরূপও হননি।” (আয়াত: ১-৩)

এই আয়াতে আল্লাহ তা‘আলা নবীজি (সা.)-কে আশ্বাস দেন যে তিনি তাঁকে পরিত্যাগ করেননি এবং তাঁর প্রতি অসন্তুষ্টও নন। এই সান্ত্বনামূলক বাণী নবীজির মানসিক চাপ কমায় এবং তাঁকে তাঁর বিরোধীদের কথা উপেক্ষা করতে উৎসাহিত করে।

আখিরাতের শ্রেষ্ঠত্ব ও আল্লাহর প্রতিশ্রুতি

আল্লাহ তাআলা সুরা দুহায় আরও বলেন: “এবং অবশ্যই তোমার জন্য আখিরাত এই দুনিয়ার চেয়ে অনেক উত্তম। এবং শীঘ্রই তোমার প্রভু তোমাকে এত বেশি দেবেন যে তুমি সন্তুষ্ট হবে।” (আয়াত: ৪-৫)

এই আয়াতে আল্লাহ নবীজিকে আশ্বাস দেন যে আখিরাত তাঁর জন্য এই পৃথিবীর জীবনের চেয়ে অনেক উত্তম হবে। হাদিসে উল্লেখ আছে যে, আল্লাহ তাঁকে প্রতিশ্রুতি দেন যে তাঁর উম্মত ক্ষমা প্রাপ্ত হবে, তারা জান্নাতে প্রথম প্রবেশ করবে এবং তাদের নেক আমল বহুগুণ বৃদ্ধি পাবে (সহিহ মুসলিম, হাদিস: ১৯৬)।

এই বাণী নবী (সা.)-এর হৃদয়ে অপার আনন্দ নিয়ে আসে।

আল্লাহর প্রতি নবীজির নির্ভরতা

ইবনে মাসউদ (রা.) থেকে বর্ণিত একটি ঘটনায় আছে, একবার নবীজি (সা.) মাটিতে শুয়েছিলেন এবং ওঠার সময় দেখা যায় তাঁর শরীরে দাগ পড়ে গেছে। ইবনে মাসউদ তাঁকে নরম কিছু বিছিয়ে দেওয়ার অনুমতি চাইলে নবীজি (সা.) বলেন: “আমার এবং দুনিয়ার সম্পর্ক কী? আমার সম্পর্ক দুনিয়ার সঙ্গে এমন একজন পথিকের মতো, যে একটি গাছের ছায়ায় বিশ্রাম নিয়েছে এবং তারপর উঠে চলে গেছে।” (সুনান তিরমিজি, হাদিস: ২৩৭৭)

এতে বোঝা যায়, দুনিয়ার প্রতি তিনি ছিলেন উদাসীন, তার সকল আগ্রহ ছিল আল্লাহর প্রতি। তিনি দুনিয়ার আরামের প্রতি আকর্ষণ বোধ করেননি, বরং তাঁর লক্ষ্য ছিল আল্লাহর সন্তুষ্টি ও আখিরাতের কল্যাণ।

যুক্ত থাকুন দ্যা ঢাকা নিউজের সাথে

The Dhaka News Bangla

রোববার, ২৭ জুলাই ২০২৫


কেন ওহি আসা বন্ধ হয়েছিল

প্রকাশের তারিখ : ২৬ জুলাই ২০২৫

featured Image
নবীজি (সা.) চল্লিশ বছর বয়সে প্রথম ওহি লাভ করেন। তিনি মানবজাতির জন্য আল্লাহর বাণী প্রচার ও শিক্ষা দেওয়ার দায়িত্ব গ্রহণ করেন এবং এই দায়িত্ব পালনে তিনি তার সর্বোচ্চ চেষ্টা করেন।তবে, এই ওহি গ্রহণের প্রক্রিয়া তাঁর জন্য শারীরিক ও মানসিকভাবে অত্যন্ত কঠিন ছিল।ওহি গ্রহণের শারীরিক ও মানসিক প্রভাবনবীজি (সা.) যখন ওহি গ্রহণ করতেন, তখন তা তাঁর উপর প্রচণ্ড চাপ সৃষ্টি করত। হাদিসে উল্লেখ আছে যে, ওহি গ্রহণের সময় তাঁর শরীরে ভারী বোঝা অনুভূত হত, যা তাঁকে ক্লান্ত ও দুর্বল করে দিত (সহিহ বুখারি, হাদিস: ২)।এই প্রক্রিয়া শারীরিক এবং মানসিকভাবে খুবই কঠিন ছিল। একই সময়ে, তিনি মক্কার বিরোধীদের থেকে প্রবল প্রত্যাখ্যান ও বিরোধিতার সম্মুখীন হচ্ছিলেন। এই চাপের কারণে তিনি কয়েকদিন অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন এবং এমনকি রাতের তাহাজ্জুদ নামাজের জন্যও উঠতে পারেননি।ওহির সাময়িক বিরতিনবীজির (সা.)-এর অসুস্থতার সময় আল্লাহ তা‘আলা কয়েকদিনের জন্য ওহি প্রেরণ বন্ধ রাখেন, যাতে তিনি স্বাস্থ্য পুনরুদ্ধার করতে পারেন। এই সময়ে মক্কার একজন নারী, আবু লাহাবের স্ত্রী, তাঁকে উপহাস করে বলেন, “দেখছি, তোমার ‘শয়তান’ তোমাকে ছেড়ে চলে গেছে!” (সহিহ বুখারি, হাদিস: ৪৯৫০)।নবী (সা.) এই উপহাসে কোনো প্রতিক্রিয়া দেখাননি, তবে ওহি না আসার কারণে তিনি গভীরভাবে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েন। তাঁর হৃদয়ে ওহি গ্রহণের জন্য তীব্র আকাঙ্ক্ষা জন্মেছিল।সুরা দুহা: নবীজির জন্য সান্ত্বনাএই সময়ে আল্লাহ তাআলা সুরা দুহা নাজিল করেন, যা নবীজির (সা.)-এর উদ্বেগ দূর করে এবং তাঁকে সান্ত্বনার কারণ হয়। শুরুতে আল্লাহ বলেন: “শপথ সকালের আলোর, এবং শপথ রাতের যখন তা নিস্তব্ধ হয়। তোমার প্রভু তোমাকে পরিত্যাগ করেননি এবং তিনি তোমার প্রতি বিরূপও হননি।” (আয়াত: ১-৩)এই আয়াতে আল্লাহ তা‘আলা নবীজি (সা.)-কে আশ্বাস দেন যে তিনি তাঁকে পরিত্যাগ করেননি এবং তাঁর প্রতি অসন্তুষ্টও নন। এই সান্ত্বনামূলক বাণী নবীজির মানসিক চাপ কমায় এবং তাঁকে তাঁর বিরোধীদের কথা উপেক্ষা করতে উৎসাহিত করে।আখিরাতের শ্রেষ্ঠত্ব ও আল্লাহর প্রতিশ্রুতিআল্লাহ তাআলা সুরা দুহায় আরও বলেন: “এবং অবশ্যই তোমার জন্য আখিরাত এই দুনিয়ার চেয়ে অনেক উত্তম। এবং শীঘ্রই তোমার প্রভু তোমাকে এত বেশি দেবেন যে তুমি সন্তুষ্ট হবে।” (আয়াত: ৪-৫)এই আয়াতে আল্লাহ নবীজিকে আশ্বাস দেন যে আখিরাত তাঁর জন্য এই পৃথিবীর জীবনের চেয়ে অনেক উত্তম হবে। হাদিসে উল্লেখ আছে যে, আল্লাহ তাঁকে প্রতিশ্রুতি দেন যে তাঁর উম্মত ক্ষমা প্রাপ্ত হবে, তারা জান্নাতে প্রথম প্রবেশ করবে এবং তাদের নেক আমল বহুগুণ বৃদ্ধি পাবে (সহিহ মুসলিম, হাদিস: ১৯৬)।এই বাণী নবী (সা.)-এর হৃদয়ে অপার আনন্দ নিয়ে আসে।আল্লাহর প্রতি নবীজির নির্ভরতাইবনে মাসউদ (রা.) থেকে বর্ণিত একটি ঘটনায় আছে, একবার নবীজি (সা.) মাটিতে শুয়েছিলেন এবং ওঠার সময় দেখা যায় তাঁর শরীরে দাগ পড়ে গেছে। ইবনে মাসউদ তাঁকে নরম কিছু বিছিয়ে দেওয়ার অনুমতি চাইলে নবীজি (সা.) বলেন: “আমার এবং দুনিয়ার সম্পর্ক কী? আমার সম্পর্ক দুনিয়ার সঙ্গে এমন একজন পথিকের মতো, যে একটি গাছের ছায়ায় বিশ্রাম নিয়েছে এবং তারপর উঠে চলে গেছে।” (সুনান তিরমিজি, হাদিস: ২৩৭৭)এতে বোঝা যায়, দুনিয়ার প্রতি তিনি ছিলেন উদাসীন, তার সকল আগ্রহ ছিল আল্লাহর প্রতি। তিনি দুনিয়ার আরামের প্রতি আকর্ষণ বোধ করেননি, বরং তাঁর লক্ষ্য ছিল আল্লাহর সন্তুষ্টি ও আখিরাতের কল্যাণ।

The Dhaka News Bangla


কপিরাইট © ২০২৫ The Dhaka News Bangla । সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত