শনিবার, ২৬ জুলাই ২০২৫
The Dhaka News Bangla

দোলনায় দোল খেতে খেতে কবরে চলে গেল আয়মান

দোলনায় দোল খেতে খেতে কবরে চলে গেল আয়মান

প্রতিদিনের মতো ক্লাস শেষে স্কুলের দোলনায় দোল খাচ্ছিল চতুর্থ শ্রেণির শিক্ষার্থী আয়মান (১০)। হঠাৎ করে একটি প্রশিক্ষণ যুদ্ধবিমান বিকট শব্দ করে এসে বিধ্বস্ত হয় তার স্কুলে। বিধ্বস্ত বিমান থেকে উত্তপ্ত ফুয়েল এসে পড়ে আয়মানের পিঠ ও হাত-পায়ে। এর ফলে তার শরীরের ৪০ শতাংশ দগ্ধ হয়ে যায়। চারদিন চিকিৎসাধীন থাকার পর শুক্রবার তার মৃত্যু হয়।

শুক্রবার (২৫ জুলাই) রাত ৯টায় শরীয়তপুরের ভেদরগঞ্জ উপজেলার নারায়ণপুর ইউনিয়নের বাসুদেবপুর গ্রামে আয়মানের দ্বিতীয় জানাজা নামাজ অনুষ্ঠিত হয়েছে। নিহত আয়মান বাসুদেবপুর গ্রামের বাপ্পি হাওলাদার ও আয়েশা আক্তার কাকন দম্পতির মেয়ে।

পরিবার ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, আয়মানের বাবা বাপ্পি হাওলাদার তার ব্যবসার সুবাদে দীর্ঘদিন ধরে ঢাকার উত্তরা দিয়াবাড়ি এলাকায় পরিবার নিয়ে বসবাস করতেন। গত সোমবার দুপুরে মা আয়েশা আক্তার কাকন অপেক্ষায় ছিলেন তার ফুটফুটে মেয়ে আয়মান ক্লাস শেষে বাড়ি ফিরবে। এসেই এটা-ওটা নিয়ে বায়না করবে আদুরে মেয়েটি। কিন্তু বিমানবাহিনীর প্রশিক্ষণ যুদ্ধবিমান তার স্কুলে বিধ্বস্ত হওয়ার ঘটনায় দগ্ধ হয়েছে আয়মান। শরীরে ৪০ শতাংশ দগ্ধ নিয়ে এমন খবর স্কুলের এক শিক্ষিকার মোবাইল থেকে তার বাবাকে জানায় সে। খবর পেয়েই কান্নায় ভেঙে পড়ে মা আয়েশা আক্তার কানন।

বিমান দুর্ঘটনায় দগ্ধ হয়ে আয়মান চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার পরিবারকে জানায়, কেমন ছিল সেই ভয়ানক মুহূর্তটি। আয়মানের বরাত দিয়ে তার পরিবারের সদস্যরা গণমাধ্যমকে জানায়, প্রতিদিনের মতো স্কুলের ক্লাস শেষ করে স্কুলের দোলনায় দোল খাচ্ছিল আয়মান। ছুটির ঘণ্টা পড়লেই বাড়ি গিয়ে কী কী করবে, তা ভাবছিল সে। এমন মুহূর্তে হঠাৎ বিকট শব্দে একটি যুদ্ধবিমান এসে বিধ্বস্ত হয় তার স্কুল মাইলস্টোনে। আয়মান তখন পালানোর চেষ্টা করলে বিমানের জেট ফুয়েল এসে পড়ে তার শরীরে। এতে তার পিঠ ও হাত-পা ঝলসে যায়। ওই অবস্থায় আয়মান তার এক শিক্ষিকার কাছে গিয়ে তার মোবাইল থেকে পরিবারকে বিষয়টি জানায়। এরপর তার বাবা বাপ্পি হাওলাদার তাকে উদ্ধার করে প্রথমে একটি বেসরকারি হাসপাতাল ও পরবর্তীতে উন্নত চিকিৎসার জন্য জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে ভর্তি করেন। সেখানে চারদিন নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) চিকিৎসাধীন অবস্থায় শুক্রবার সকালে মৃত্যু হয় তার।

ছোট্ট আয়মানের মৃত্যুর খবর যখন শরীয়তপুরের গ্রামের বাড়িতে পৌঁছায়, তখন পুরো এলাকায় শোকের ছায়া নেমে আসে। দোলনায় দোল খেতে খেতে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়া আয়মানের প্রথম জানাজা শুক্রবার জুম্মার নামাজের পরে রাজধানীর উত্তরায় অনুষ্ঠিত হয়। এরপর তার মরদেহ সন্ধ্যায় গ্রামের বাড়িতে পৌঁছায়। পরে রাত ৯টায় আয়মানের দ্বিতীয় জানাজা নামাজ অনুষ্ঠিত হয়। জানাজার পর আয়মানকে তার পারিবারিক কবরস্থানে দাদা মাজেদ হাওলাদারের কবরের পাশে দাফন করা হবে।

আয়মানের প্রতিবেশী সিনহা জুয়ালিদ রাফি বলেন, আয়মান যখন বাড়িতে আসতো আমাকে জড়িয়ে ধরতো। খুব মিষ্টি করে কথা বলতো। এজন্য সে সবার আদরের ছিল। ঠিক ফুলের মতো ছিল আয়মান। আজ তার এভাবে চলে যাওয়া আমরা কেউ মেনে নিতে পারছি না। এভাবে আর কারও মৃত্যু যেন না হয় এটাই আমাদের কামনা।

আয়মানের ছোট মামা শামীম আহম্মেদ বলেন, আমার ভাগ্নি চলে গেছে সবাই ওর জন্য দোয়া করবেন। আমি সাংবাদিকের মাধ্যমে প্রধান উপদেষ্টার কাছে জানাতে চাই, একজন প্রশিক্ষণরত পাইলট নির্দিষ্ট স্থান ব্যতিত কীভাবে জনবহুল স্থানে টেস্টিং করে? তদন্তের মাধ্যমে এটা আমি জানতে চাই। এ রকম যদি করতে থাকে শুধু আমার ভাগ্নি আয়মান না এমন অনেক আয়মান ভবিষ্যতে চলে যাবে। আমরা চাই, এভাবে আর কোনো ফুলের মৃত্যু না হোক।

এ বিষয়ে ভেদরগঞ্জ উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও ভারপ্রাপ্ত ইউএনও মোহাম্মদ মোজাহেরুল হক বলেন, উত্তরার মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে বিমান দুর্ঘটনার বিষয়টি অত্যন্ত দুঃখজনক ঘটনা। আমরা জানতে পেরেছি চিকিৎসাধীন অবস্থায় আয়মান মারা গিয়েছে। উপজেলা প্রশাসন নিহত পরিবারের পাশে থাকবে।

বিষয় : বিমান বিধ্বস্ত

যুক্ত থাকুন দ্যা ঢাকা নিউজের সাথে

The Dhaka News Bangla

শনিবার, ২৬ জুলাই ২০২৫


দোলনায় দোল খেতে খেতে কবরে চলে গেল আয়মান

প্রকাশের তারিখ : ২৬ জুলাই ২০২৫

featured Image
প্রতিদিনের মতো ক্লাস শেষে স্কুলের দোলনায় দোল খাচ্ছিল চতুর্থ শ্রেণির শিক্ষার্থী আয়মান (১০)। হঠাৎ করে একটি প্রশিক্ষণ যুদ্ধবিমান বিকট শব্দ করে এসে বিধ্বস্ত হয় তার স্কুলে। বিধ্বস্ত বিমান থেকে উত্তপ্ত ফুয়েল এসে পড়ে আয়মানের পিঠ ও হাত-পায়ে। এর ফলে তার শরীরের ৪০ শতাংশ দগ্ধ হয়ে যায়। চারদিন চিকিৎসাধীন থাকার পর শুক্রবার তার মৃত্যু হয়।শুক্রবার (২৫ জুলাই) রাত ৯টায় শরীয়তপুরের ভেদরগঞ্জ উপজেলার নারায়ণপুর ইউনিয়নের বাসুদেবপুর গ্রামে আয়মানের দ্বিতীয় জানাজা নামাজ অনুষ্ঠিত হয়েছে। নিহত আয়মান বাসুদেবপুর গ্রামের বাপ্পি হাওলাদার ও আয়েশা আক্তার কাকন দম্পতির মেয়ে।পরিবার ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, আয়মানের বাবা বাপ্পি হাওলাদার তার ব্যবসার সুবাদে দীর্ঘদিন ধরে ঢাকার উত্তরা দিয়াবাড়ি এলাকায় পরিবার নিয়ে বসবাস করতেন। গত সোমবার দুপুরে মা আয়েশা আক্তার কাকন অপেক্ষায় ছিলেন তার ফুটফুটে মেয়ে আয়মান ক্লাস শেষে বাড়ি ফিরবে। এসেই এটা-ওটা নিয়ে বায়না করবে আদুরে মেয়েটি। কিন্তু বিমানবাহিনীর প্রশিক্ষণ যুদ্ধবিমান তার স্কুলে বিধ্বস্ত হওয়ার ঘটনায় দগ্ধ হয়েছে আয়মান। শরীরে ৪০ শতাংশ দগ্ধ নিয়ে এমন খবর স্কুলের এক শিক্ষিকার মোবাইল থেকে তার বাবাকে জানায় সে। খবর পেয়েই কান্নায় ভেঙে পড়ে মা আয়েশা আক্তার কানন।বিমান দুর্ঘটনায় দগ্ধ হয়ে আয়মান চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার পরিবারকে জানায়, কেমন ছিল সেই ভয়ানক মুহূর্তটি। আয়মানের বরাত দিয়ে তার পরিবারের সদস্যরা গণমাধ্যমকে জানায়, প্রতিদিনের মতো স্কুলের ক্লাস শেষ করে স্কুলের দোলনায় দোল খাচ্ছিল আয়মান। ছুটির ঘণ্টা পড়লেই বাড়ি গিয়ে কী কী করবে, তা ভাবছিল সে। এমন মুহূর্তে হঠাৎ বিকট শব্দে একটি যুদ্ধবিমান এসে বিধ্বস্ত হয় তার স্কুল মাইলস্টোনে। আয়মান তখন পালানোর চেষ্টা করলে বিমানের জেট ফুয়েল এসে পড়ে তার শরীরে। এতে তার পিঠ ও হাত-পা ঝলসে যায়। ওই অবস্থায় আয়মান তার এক শিক্ষিকার কাছে গিয়ে তার মোবাইল থেকে পরিবারকে বিষয়টি জানায়। এরপর তার বাবা বাপ্পি হাওলাদার তাকে উদ্ধার করে প্রথমে একটি বেসরকারি হাসপাতাল ও পরবর্তীতে উন্নত চিকিৎসার জন্য জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে ভর্তি করেন। সেখানে চারদিন নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) চিকিৎসাধীন অবস্থায় শুক্রবার সকালে মৃত্যু হয় তার।ছোট্ট আয়মানের মৃত্যুর খবর যখন শরীয়তপুরের গ্রামের বাড়িতে পৌঁছায়, তখন পুরো এলাকায় শোকের ছায়া নেমে আসে। দোলনায় দোল খেতে খেতে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়া আয়মানের প্রথম জানাজা শুক্রবার জুম্মার নামাজের পরে রাজধানীর উত্তরায় অনুষ্ঠিত হয়। এরপর তার মরদেহ সন্ধ্যায় গ্রামের বাড়িতে পৌঁছায়। পরে রাত ৯টায় আয়মানের দ্বিতীয় জানাজা নামাজ অনুষ্ঠিত হয়। জানাজার পর আয়মানকে তার পারিবারিক কবরস্থানে দাদা মাজেদ হাওলাদারের কবরের পাশে দাফন করা হবে।আয়মানের প্রতিবেশী সিনহা জুয়ালিদ রাফি বলেন, আয়মান যখন বাড়িতে আসতো আমাকে জড়িয়ে ধরতো। খুব মিষ্টি করে কথা বলতো। এজন্য সে সবার আদরের ছিল। ঠিক ফুলের মতো ছিল আয়মান। আজ তার এভাবে চলে যাওয়া আমরা কেউ মেনে নিতে পারছি না। এভাবে আর কারও মৃত্যু যেন না হয় এটাই আমাদের কামনা। আয়মানের ছোট মামা শামীম আহম্মেদ বলেন, আমার ভাগ্নি চলে গেছে সবাই ওর জন্য দোয়া করবেন। আমি সাংবাদিকের মাধ্যমে প্রধান উপদেষ্টার কাছে জানাতে চাই, একজন প্রশিক্ষণরত পাইলট নির্দিষ্ট স্থান ব্যতিত কীভাবে জনবহুল স্থানে টেস্টিং করে? তদন্তের মাধ্যমে এটা আমি জানতে চাই। এ রকম যদি করতে থাকে শুধু আমার ভাগ্নি আয়মান না এমন অনেক আয়মান ভবিষ্যতে চলে যাবে। আমরা চাই, এভাবে আর কোনো ফুলের মৃত্যু না হোক।এ বিষয়ে ভেদরগঞ্জ উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও ভারপ্রাপ্ত ইউএনও মোহাম্মদ মোজাহেরুল হক বলেন, উত্তরার মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে বিমান দুর্ঘটনার বিষয়টি অত্যন্ত দুঃখজনক ঘটনা। আমরা জানতে পেরেছি চিকিৎসাধীন অবস্থায় আয়মান মারা গিয়েছে। উপজেলা প্রশাসন নিহত পরিবারের পাশে থাকবে।

The Dhaka News Bangla


কপিরাইট © ২০২৫ The Dhaka News Bangla । সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত