
রাজধানীর উত্তরায় মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজ ক্যাম্পাসে বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর প্রশিক্ষণ বিমান বিধ্বস্ত হয়ে হতাহতের ঘটনায় আজ মঙ্গলবার সরকার এক দিনের রাষ্ট্রীয় শোক ঘোষণা করেছে। প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকে গতকাল সোমবার পাঠানো এক বার্তায় রাষ্ট্রীয় শোক পালনের বিষয়টি জানানো হয়।
বার্তায় বলা হয়, শোক পালনের উদ্দেশ্যে দেশের সব সরকারি, আধা সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত থাকবে। পাশাপাশি সব সরকারি, বেসরকারি ভবন ও বিদেশে বাংলাদেশি মিশনেও জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত থাকবে। এছাড়া আহত ও নিহতদের জন্য দেশের সব ধর্মীয় উপাসনালয়ে বিশেষ প্রার্থনার আয়োজন করা হবে।
রাষ্ট্রপতি-প্রধান উপদেষ্টার শোক :রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন ও অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস বিমান বিধ্বস্তে হতাহতের ঘটনায় শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন। গতকাল সোমবার পৃথক শোকবার্তায় তারা নিহতদের আত্মার মাগফেরাত কামনা করেন ও শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান। একই সঙ্গে আহতদের দ্রুত আরোগ্য কামনা করেন।
শোকবার্তায় প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘বিমান বিধ্বস্তে হতাহতের ঘটনায় আমি গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করছি। এ দুর্ঘটনায় বিমানসেনা ও মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও শিক্ষক-কর্মচারীসহ অন্যদের যে ক্ষতি হয়েছে তা অপূরণীয়। জাতির জন্য এটি একটি গভীর বেদনার ক্ষণ। তিনি আহতদের দ্রুত আরোগ্য কামনা এবং সংশ্লিষ্ট হাসপাতালসহ সব কর্তৃপক্ষকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে পরিস্থিতি মোকাবিলার নির্দেশ দেন। সরকার দুর্ঘটনার কারণ অনুসন্ধানে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ এবং সকল ধরনের সহায়তা নিশ্চিত করবে বলে জানান।’
বিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় শোক প্রকাশ করেছে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সংগঠনের নেতৃবৃন্দ। বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ফেসবুকে একটি পোস্টে লেখেন, ‘মাইলস্টোন কলেজে ঘটে যাওয়া মর্মান্তিক বিমান দুর্ঘটনায় আমরা গভীরভাবে শোকাহত। একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, যেখানে শিশু, কিশোর বা তরুণেরা তাদের শিক্ষা, বিকাশ ও নিরাপত্তার জন্য আশাবাদী হয়ে ওঠে, সেখানে এমন ভয়াবহতা কখনো কাম্য নয়। আমি নিহত শিক্ষার্থীর আত্মার মাগফেরাত কামনা করছি এবং আহতদের দ্রুত সুস্থতা কামনা করছি।’ তিনি বিএনপির নেতাকর্মী ও সংশ্লিষ্ট পেশাজীবীদের ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের পাশে দাঁড়ানোর আহ্বান জানান। তারেক রহমান আরও বলেন, ‘এই দুঃসময়ে আমাদের জাতি হিসেবে ঐক্যবদ্ধ হয়ে এই সংকট মোকাবিলা করতে হবে।’
শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন শিক্ষা উপদেষ্টা ড. সি আর আবরার, ভূমি উপদেষ্টা আলী ইমাম মজুমদার এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা উপদেষ্টা ডা. বিধান রঞ্জন রায় পোদ্দার। তারা নিহতদের বিদেহী আত্মার মাগফেরাত ও তাদের শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি গভীর সমবেদনা জ্ঞাপন করেন।
জাতীয় পার্টি-জেপির চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন মঞ্জু ও মহাসচিব শেখ শহীদুল ইসলাম বিমান বিধ্বস্ত হয়ে প্রাণহানির ঘটনায় শোক জানিয়েছেন।
এক শোক বিবৃতিতে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘মর্মস্পর্শী ও হৃদয়বিদারক এ দুর্ঘটনায় শোক জানানোর ভাষা আমার জানা নেই। আমি নিহত ও আহতদের পরিবারের প্রতি গভীর সহমর্মিতা জ্ঞাপন করছি, আল্লাহ যেন তাদের এই বিশাল শোক সহ্য করার ক্ষমতা দান করেন।’ বিবৃতিতে তিনি বিমান দুর্ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত দাবি করে দুর্ঘটনায় নিহত শিক্ষার্থীদের বিদেহী আত্মার মাগফেরাত এবং আহতদের দ্রুত সুস্থতা কামনা করেন।
গতকাল বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী স্বাক্ষরিত এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, রাষ্ট্রীয় শোক দিবস উপলক্ষে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়সহ সারা দেশের দলীয় কার্যালয়গুলোতে কালো পতাকা উত্তোলন করা হবে। এছাড়া আজ বেলা সাড়ে ১১টায় নয়াপল্টনস্থ বিএনপি কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের নিচতলায় এবং দেশের বিভিন্ন স্থানে মিলাদ ও দোয়া মাহফিলের আয়োজন করা হয়েছে।
এদিকে জামায়াত ইসলামী, জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি), ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, বাংলাদেশ খেলাফতে মজলিস, নেজামে ইসলামসহ কয়েকটি দল থেকে পৃথক শোকবার্তা দেওয়া হয়। গতকাল দুপুরে রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে চলমান জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোর দ্বিতীয় পর্বের আলোচনা বিমান দুর্ঘটনার পরপরই মুলতুবি ঘোষণা করা হয়।
জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল রফিকুল ইসলাম খান বলেন, ‘আহত ব্যক্তিদের দ্রুত আরোগ্য কামনা করে সরকারকে আহত ও নিহত ব্যক্তিদের পরিবারের পাশে দাঁড়ানোর আহ্বান জানান। পাশাপাশি ক্ষতিপূরণ দেওয়ার জন্য বলেন। ভবিষ্যতে যাতে এ ধরনের দুর্ঘটনা না ঘটে এজন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ করেন।’
শোক প্রকাশ করে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক মো. নাহিদ ইসলাম হতাহতদের উদ্ধার ও চিকিৎসায় দলের নেতাকর্মীদের সহায়তার নির্দেশ দেন। গতকাল এনসিপির পক্ষ থেকে পাঠানো এক বার্তায় জানানো হয়, এনসিপির সর্বস্তরের নেতাকর্মীদের হতাহতদের চিকিৎসায় সহায়তা, রক্তদান, অ্যাম্বুলেন্স যাতায়াত এবং উদ্ধার কাজে নিয়োজিত সব বাহিনীকে সহায়তার নির্দেশ দিয়েছেন নাহিদ ইসলাম। এছাড়া জাতীয় যুবশক্তি ও এনসিপির ডক্টরস উইংকে আহতদের সহায়তায় দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার নির্দেশ দেন তিনি। এনসিপির সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক আরিফুল ইসলাম আদীব বলেন, ‘আহত ব্যক্তিদের সুচিকিৎসা নিশ্চিতে বিশেষ গুরুত্ব দিতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানান। ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় যুদ্ধবিমানের প্রশিক্ষণ কার্যক্রম পুনর্বিবেচনা করতে হবে, না হওয়াটাই বাঞ্ছনীয়।’ অতীতে প্রশিক্ষণ বিমান দুর্ঘটনার কথা জানিয়ে ইসলামী আন্দোলনের প্রেসিডিয়াম সদস্য আশরাফ আলী আকন বলেন, বিমানগুলোর পরীক্ষানিরীক্ষা করে যেন প্রশিক্ষণের জন্য ব্যবহার করা হয়।
এছাড়া অন্যান্যের মধ্যে শোক জানিয়েছেন লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি-এলডিপির প্রেসিডেন্ট ড. কর্নেল অলি আহমদ বীরবিক্রম (অব.), জাতীয় পার্টি (জাপা) চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ কাদের, জাতীয় পার্টির (জাপা) জ্যেষ্ঠ নেতা ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, এ বি এম রুহুল আমিন হাওলাদার ও মুজিবুল হক চুন্নু, বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি-বাংলাদেশ ন্যাপ চেয়ারম্যান জেবেল রহমান গানি ও মহাসচিব এম. গোলাম মোস্তফা ভুঁইয়া, জনতা পার্টি বাংলাদেশ-জেপিবির নির্বাহী চেয়ারম্যান গোলাম সারোয়ার মিলন ও মহাসচিব শওকত মাহমুদ, জাতীয় পার্টি (কাজী জাফর) চেয়ারম্যান ও ১২ দলীয় জোটের প্রধান মোস্তফা জামাল হায়দার, জাকের পার্টি চেয়ারম্যান মোস্তফা আমীর ফয়সল এবং এফবিসিসিআইর প্রশাসক মো. হাফিজুর রহমান।
মঙ্গলবার, ২২ জুলাই ২০২৫
প্রকাশের তারিখ : ২২ জুলাই ২০২৫
যুক্ত থাকুন দ্যা ঢাকা নিউজের সাথে