রোববার, ২০ জুলাই ২০২৫
The Dhaka News Bangla

হাতিয়ায় সহকারী শিক্ষা অফিসারের বিরুদ্ধে রমরমা ঘুষ বানিজ্যর অভিযোগ

হাতিয়ায় সহকারী শিক্ষা অফিসারের বিরুদ্ধে রমরমা ঘুষ বানিজ্যর অভিযোগ
হাতিয়া প্রাথমিক সহকারী শিক্ষা অফিসার মাহবুবুর রহমান

নোয়াখালী জেলার হাতিয়া উপজেলায় সহকারী প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মাহবুবুর রহমানের বিরুদ্ধে ব্যাপক হারে বিভিন্ন অজুহাতে প্রধান শিক্ষকদের থেকে ঘুষ বানিজ্যর অভিযোগ উঠেছে। 

এই ঘটনায় হাতিয়া উপজেলার  ফরেস্ট সেন্টার সপ্রবির প্রধান শিক্ষক মুহাম্মদ আহসান উল্যাহ অন্যান্য শিক্ষকের পক্ষে থেকে বাদী হয়ে উপজেলা শিক্ষা অফিসারের নিকট  গত ১৬ জুলাই একটি অভিযোগ দায়ের করেন

জানা যায়, সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সংখ্যা ২২৭ টি। তার মধ্যে সহকারী উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মাহবুবুর রহমান এর দায়িত্বে আছে প্রায় ১১৫ টি বিদ্যালয়। যেখানে কর্মরত শিক্ষক প্রায় ৭০০ জনের বেশি। 

২০২৪- ২৫ অর্থ বছরে বিভিন্ন বিদ্যালয়ের জন্য সরকার কৃর্তক স্লিপ  বরাদ্দ ছাত্র - ছাত্রী অনুপাতে ৫০০০০ ( পঞ্চাশ হাজার) টাকা, কিছু বিদ্যালয়ে ৭৫০০০ ( পঁচাত্তর হাজার) টাকা। বিভিন্ন বিদ্যালয় পরিদর্শন এর নামে সরকারি বরাদ্দ স্লিপ, রুটিন মেইনটেইন্স, সাব ক্লাস্টার এর টাকা থেকে ১০% হারে ঘুষ হিসেবে জোরপূর্বক টাকা নিচ্ছেন সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসার মাহবুবুর রহমান। 

বিভিন্ন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকদের সাথে যোগাযোগ করলে বেশিরভাগই মাহবুবুর রহমান এর ঘুষ বাণিজ্যের কথা স্বীকার করেন। তিনি এই সব সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের বিভিন্ন প্রধান শিক্ষককে এই টাকা দিতে বাধ্য করেন। যার ফলে বিদ্যালয়ের উন্নয়ন কার্যক্রম ব্যহত হচ্ছে। উন্নয়ন কার্যক্রমের গুরুত্বপূর্ণ অংশ ছাত্র - ছাত্রীদের শিখন শেখানো উপকরণ। ঘুষ প্রদান করায় প্রধান শিক্ষকগণ এই উপকরণ যথাযথ ক্রয় করতে পারেনা। যার কারণে শিক্ষার্থীদের শিখন কার্যক্রম ব্যহত হয়।  

আরো জানা যায়, মাহবুবুর রহমান হাতিয়া স্টেশনে বিগত সময়ে ৩ বছর চাকুরী করেন। এই ঘুষ বাণিজ্যের জন্য তখন তাকে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর বদলী করে। ২০২৪ সালে নভেম্বর মাসে তিনি আবার হাতিয়া যোগদান করেন। শুরু হয় বেপরোয়া ঘুষ বাণিজ্য। সাব ক্লাস্টার প্রশিক্ষণে শিক্ষক প্রতি বরাদ্দ ৫৪০ টাকা। সেখান থেকে তিনি করেন হোটেল বাণিজ্য। নিম্নমানের খাবার দিয়ে ৫৪০ টাকা করে শিক্ষকের পুরো টাকা তিনি রেখে দেন। বিভিন্ন সাব ক্লাস্টার প্রশিক্ষণে তিনি যথাসময়ে না এসে দুপুরের খাওয়ার সময় এসে  তিনি সাব ক্লাস্টার ছুটি দিয়ে দেন। গল্প করে সময় কাটাতে হয় শিক্ষকদের। 

শিক্ষকরা অভিযোগ করে বলেন, মাহবুবুর রহমান  শিক্ষকদের রাজনৈতিক ভয় দেখান। তিনি কথায় কথায় তার আত্মীয় লক্ষীপুরের বিএনপির সাবেক এমপি আবুল খায়ের এর ভয় দেখান। শিক্ষকেরা এই আচরণে যথেষ্ট বিব্রত বোধ করেন। প্রায় শিক্ষকের সাথে খারাপ আচরণ করেন। অসংখ্য প্রধান শিক্ষক ও সহকারী শিক্ষক এই ঘুষ বাণিজ্যের স্বীকারোক্তি প্রদান করেন।

জানা যায়, হাতিয়া বাজার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক একরামুল হক থেকে ৪ হাজার, ফরেস্ট সেন্টার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আহছান উল্ল্যাহ থেকে ৫ হাজার, মাইনউদ্দিন বাজার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জ্যোতি লাল দাস থেকে ৪ হাজার, আলহাজ্ব নুরুন্নেছা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আবদুল মালেক থেকে ৫ হাজার, চরআজমল ভূমিহীন বাজার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আকতার হোসেন থেকে ৬ হাজার, ইউনুসপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আলতাফ হোসেন থেকে ৪ হাজার এবং মীর আদর্শ গ্রাম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রীতা রানী মজুমদার থেকে ৩ হাজার টাকা করে ঘুষ নেন বলে তারা জানান। 

তারা আরো বলেন, মাহবুবুর রহমান এর অন্যায় আচরণ ও অনৈতিক দাবী গুলো থেকে আমরা রক্ষা পেতে চাই এবং তার বিরুদ্ধে তদন্ত করে যথাযথ আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার দাবী জানাই।

এই বিষয়ে মাহবুবুর রহমান সকল অভিযোগ অস্বীকার করেন এবং শিক্ষকরা এই সব বিষয় জানেন। আমি কখনো কারো প্রভাব দেখাই না বলে কেটে দেন। 

এই বিষয়ে হাতিয়া উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার আব্দুল জব্বার বলেন, তার বিষয়ে কয়েক বার অভিযোগ পেয়ে তাকে শোকজ করছি কিন্তু তাকে বার বার সতর্কতা করেছি আমি। এবং এবার শিক্ষকদের পক্ষ থেকে আরো  একটি অভিযোগ পেয়েছি যা তদন্ত শেষে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এ বিষয়ে হাতিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও)  মোঃ আলাউদ্দিনের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তিনি বলেন, শিক্ষা অফিসে কোনো দুর্নীতি বা ঘুষের অভিযোগ সত্য হলে আইন অনুযায়ী কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। প্রাথমিক শিক্ষা হলো জাতির ভিত্তি, সেখানে কোনো অবৈধ লেনদেনের জায়গা থাকতে পারে না।

বিষয় : অভিযোগ

যুক্ত থাকুন দ্যা ঢাকা নিউজের সাথে

The Dhaka News Bangla

রোববার, ২০ জুলাই ২০২৫


হাতিয়ায় সহকারী শিক্ষা অফিসারের বিরুদ্ধে রমরমা ঘুষ বানিজ্যর অভিযোগ

প্রকাশের তারিখ : ১৯ জুলাই ২০২৫

featured Image
নোয়াখালী জেলার হাতিয়া উপজেলায় সহকারী প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মাহবুবুর রহমানের বিরুদ্ধে ব্যাপক হারে বিভিন্ন অজুহাতে প্রধান শিক্ষকদের থেকে ঘুষ বানিজ্যর অভিযোগ উঠেছে। এই ঘটনায় হাতিয়া উপজেলার  ফরেস্ট সেন্টার সপ্রবির প্রধান শিক্ষক মুহাম্মদ আহসান উল্যাহ অন্যান্য শিক্ষকের পক্ষে থেকে বাদী হয়ে উপজেলা শিক্ষা অফিসারের নিকট  গত ১৬ জুলাই একটি অভিযোগ দায়ের করেনজানা যায়, সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সংখ্যা ২২৭ টি। তার মধ্যে সহকারী উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মাহবুবুর রহমান এর দায়িত্বে আছে প্রায় ১১৫ টি বিদ্যালয়। যেখানে কর্মরত শিক্ষক প্রায় ৭০০ জনের বেশি। ২০২৪- ২৫ অর্থ বছরে বিভিন্ন বিদ্যালয়ের জন্য সরকার কৃর্তক স্লিপ  বরাদ্দ ছাত্র - ছাত্রী অনুপাতে ৫০০০০ ( পঞ্চাশ হাজার) টাকা, কিছু বিদ্যালয়ে ৭৫০০০ ( পঁচাত্তর হাজার) টাকা। বিভিন্ন বিদ্যালয় পরিদর্শন এর নামে সরকারি বরাদ্দ স্লিপ, রুটিন মেইনটেইন্স, সাব ক্লাস্টার এর টাকা থেকে ১০% হারে ঘুষ হিসেবে জোরপূর্বক টাকা নিচ্ছেন সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসার মাহবুবুর রহমান। বিভিন্ন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকদের সাথে যোগাযোগ করলে বেশিরভাগই মাহবুবুর রহমান এর ঘুষ বাণিজ্যের কথা স্বীকার করেন। তিনি এই সব সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের বিভিন্ন প্রধান শিক্ষককে এই টাকা দিতে বাধ্য করেন। যার ফলে বিদ্যালয়ের উন্নয়ন কার্যক্রম ব্যহত হচ্ছে। উন্নয়ন কার্যক্রমের গুরুত্বপূর্ণ অংশ ছাত্র - ছাত্রীদের শিখন শেখানো উপকরণ। ঘুষ প্রদান করায় প্রধান শিক্ষকগণ এই উপকরণ যথাযথ ক্রয় করতে পারেনা। যার কারণে শিক্ষার্থীদের শিখন কার্যক্রম ব্যহত হয়।  আরো জানা যায়, মাহবুবুর রহমান হাতিয়া স্টেশনে বিগত সময়ে ৩ বছর চাকুরী করেন। এই ঘুষ বাণিজ্যের জন্য তখন তাকে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর বদলী করে। ২০২৪ সালে নভেম্বর মাসে তিনি আবার হাতিয়া যোগদান করেন। শুরু হয় বেপরোয়া ঘুষ বাণিজ্য। সাব ক্লাস্টার প্রশিক্ষণে শিক্ষক প্রতি বরাদ্দ ৫৪০ টাকা। সেখান থেকে তিনি করেন হোটেল বাণিজ্য। নিম্নমানের খাবার দিয়ে ৫৪০ টাকা করে শিক্ষকের পুরো টাকা তিনি রেখে দেন। বিভিন্ন সাব ক্লাস্টার প্রশিক্ষণে তিনি যথাসময়ে না এসে দুপুরের খাওয়ার সময় এসে  তিনি সাব ক্লাস্টার ছুটি দিয়ে দেন। গল্প করে সময় কাটাতে হয় শিক্ষকদের। শিক্ষকরা অভিযোগ করে বলেন, মাহবুবুর রহমান  শিক্ষকদের রাজনৈতিক ভয় দেখান। তিনি কথায় কথায় তার আত্মীয় লক্ষীপুরের বিএনপির সাবেক এমপি আবুল খায়ের এর ভয় দেখান। শিক্ষকেরা এই আচরণে যথেষ্ট বিব্রত বোধ করেন। প্রায় শিক্ষকের সাথে খারাপ আচরণ করেন। অসংখ্য প্রধান শিক্ষক ও সহকারী শিক্ষক এই ঘুষ বাণিজ্যের স্বীকারোক্তি প্রদান করেন।জানা যায়, হাতিয়া বাজার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক একরামুল হক থেকে ৪ হাজার, ফরেস্ট সেন্টার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আহছান উল্ল্যাহ থেকে ৫ হাজার, মাইনউদ্দিন বাজার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জ্যোতি লাল দাস থেকে ৪ হাজার, আলহাজ্ব নুরুন্নেছা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আবদুল মালেক থেকে ৫ হাজার, চরআজমল ভূমিহীন বাজার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আকতার হোসেন থেকে ৬ হাজার, ইউনুসপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আলতাফ হোসেন থেকে ৪ হাজার এবং মীর আদর্শ গ্রাম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রীতা রানী মজুমদার থেকে ৩ হাজার টাকা করে ঘুষ নেন বলে তারা জানান। তারা আরো বলেন, মাহবুবুর রহমান এর অন্যায় আচরণ ও অনৈতিক দাবী গুলো থেকে আমরা রক্ষা পেতে চাই এবং তার বিরুদ্ধে তদন্ত করে যথাযথ আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার দাবী জানাই।এই বিষয়ে মাহবুবুর রহমান সকল অভিযোগ অস্বীকার করেন এবং শিক্ষকরা এই সব বিষয় জানেন। আমি কখনো কারো প্রভাব দেখাই না বলে কেটে দেন। এই বিষয়ে হাতিয়া উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার আব্দুল জব্বার বলেন, তার বিষয়ে কয়েক বার অভিযোগ পেয়ে তাকে শোকজ করছি কিন্তু তাকে বার বার সতর্কতা করেছি আমি। এবং এবার শিক্ষকদের পক্ষ থেকে আরো  একটি অভিযোগ পেয়েছি যা তদন্ত শেষে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।এ বিষয়ে হাতিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও)  মোঃ আলাউদ্দিনের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তিনি বলেন, শিক্ষা অফিসে কোনো দুর্নীতি বা ঘুষের অভিযোগ সত্য হলে আইন অনুযায়ী কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। প্রাথমিক শিক্ষা হলো জাতির ভিত্তি, সেখানে কোনো অবৈধ লেনদেনের জায়গা থাকতে পারে না।

The Dhaka News Bangla


কপিরাইট © ২০২৫ The Dhaka News Bangla । সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত