মঙ্গলবার, ১৫ জুলাই ২০২৫
The Dhaka News Bangla

দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী যমজ বোনের জিপিএ-৫ অর্জন

দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী যমজ বোনের জিপিএ-৫ অর্জন

সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর উপজেলার পোতাজিয়া চন্দ্রপাড়া গ্রামের দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী যমজ দুই বোন, আফিয়া আক্তার ও ইভা আক্তার, এবার এসএসসি পরীক্ষায় মানবিক বিভাগ থেকে জিপিএ-৫ অর্জন করেছেন। তারা ইংরেজির মতো কঠিন বিষয়ে ২০০ এর মধ্যে ১৯৫ নম্বর পেয়ে সত্যিই অসাধারণ ফলাফল করেছেন।

দুই যমজ বোনই লেখাপড়া করেছেন শাহজাদপুর উপজেলার শাহজাদপুর সরকারি মডেল পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ে। জন্ম থেকেই তারা চোখে কম দেখেন। দূরের কিছু দেখতে পান না, কাছ থেকে বই সামনে এনে পড়তে হয়। সব সীমাবদ্ধতা পেছনে ফেলে এই সাফল্য তাদের বড় এক অর্জন।

শিক্ষার্থী আফিয়া আক্তার বলেন, আমার লেখাপড়ার ক্ষেত্রে চোখের সমস্যাটাই ছিল সবচেয়ে বড় বাধা। বোর্ডে লেখা ঠিকমতো দেখতে পেতাম না। স্কুলে যাওয়ার সময় রাস্তা পার হতে ভয় লাগত। অনেক কষ্ট করে পড়ালেখা চালিয়ে গেছি।

ভবিষ্যত পরিকল্পনা নিয়ে তিনি আরও বলেন, ভালো কলেজে ভর্তি হয়ে এইচএসসিতেও ভালো ফল করতে চাই। এরপর বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করে বিসিএস দিয়ে একজন শিক্ষক হতে চাই।

অপর যমজ বোন ইভা আক্তার বলেন, আমার দৃষ্টিশক্তির সমস্যা সবসময় পড়াশোনার পথে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে, তবে কখনো মনোবল ভাঙেনি। বই দূর থেকে পড়তে পারি না, খুব কাছে এনে পড়তে হয়। স্কুলে যাওয়া, রাস্তা পার হওয়া - সব কিছুতেই সমস্যায় পড়েছি। অনেক কষ্ট করেছি, তবুও থেমে থাকিনি। আমার স্বপ্ন বিসিএস ক্যাডার হবো।

তাদের বাবা প্রকৌশলী গোলাম আক্তার বলেন, আমার দুই মেয়ে অনেক পরিশ্রম করে আজকের এই অবস্থানে এসেছে। ওদের স্কুলে যাওয়া খুবই কঠিন ছিল। আমি বা ওদের মা হাতে ধরে স্কুলে নিয়ে যেতাম। অফিস থেকে ফিরে ক্লান্ত হলেও কোচিং থেকে আনতাম। ওদের বন্ধু-বান্ধবীরাও অনেক সাহায্য করেছে। রাত ১২টা বা ১টা পর্যন্ত পড়েছে। আমি বলতাম, এত রাত পর্যন্ত পড়লে চোখের অবস্থা আরও খারাপ হবে। কিন্তু ওরা বলতো, ‘পড়াশোনা না করলে কিছুই হবে না’। আমি চাই ওরা ভালো কলেজে ভর্তি হোক, বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করুক এবং বিসিএস দিয়ে ক্যাডার হোক।

দুই বোনের মা তানিয়া শাবনাজ বলেন, ছোটবেলা থেকেই চোখে সমস্যা ছিল। তাই বাসায় আলাদা দুইজন শিক্ষক রাখা হয়েছিল। ওরা পড়াশোনা ছাড়া কিছু বোঝে না। আমরা চেষ্টা করেছি সাহস দিতে, কিন্তু ওরা নিজেদের জন্য যেভাবে লড়েছে, সেটা অনেক বড় ব্যাপার। আমি ওদের ফলাফলে খুব খুশি। দোয়া করি, যেন সামনে আরও ভালো করে।

শাহজাদপুর সরকারি মডেল পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের ইংরেজি শিক্ষক ফারজানা ইয়াসমিন বলেন, দুই বোনই মানবিক বিভাগ থেকে জিপিএ-৫ পেয়েছে। ওরা চোখে কম দেখে, কিন্তু পড়াশোনায় চমৎকার। ইংরেজির মতো বিষয়ে ২০০ নম্বরের মধ্যে ১৯৫ পেয়েছে। যদি সঠিকভাবে সহায়তা পায়, তাহলে বিসিএসের স্বপ্ন বাস্তব হবেই।

গত কয়েক বছরের তুলনায় এবারের এসএসসি পরীক্ষার ফলাফলে উল্লেখযোগ্যভাবে ফলাফল কমে গেলেও দৃষ্টিপ্রতিবন্ধকতা কোনো শিক্ষার্থীর স্বপ্ন থামিয়ে দিতে পারে না - যমজ এই দুই বোনের সাফল্য সেই বার্তাই আবারও দৃঢ়ভাবে প্রমাণ করেছে।

যুক্ত থাকুন দ্যা ঢাকা নিউজের সাথে

The Dhaka News Bangla

মঙ্গলবার, ১৫ জুলাই ২০২৫


দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী যমজ বোনের জিপিএ-৫ অর্জন

প্রকাশের তারিখ : ১৫ জুলাই ২০২৫

featured Image
সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর উপজেলার পোতাজিয়া চন্দ্রপাড়া গ্রামের দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী যমজ দুই বোন, আফিয়া আক্তার ও ইভা আক্তার, এবার এসএসসি পরীক্ষায় মানবিক বিভাগ থেকে জিপিএ-৫ অর্জন করেছেন। তারা ইংরেজির মতো কঠিন বিষয়ে ২০০ এর মধ্যে ১৯৫ নম্বর পেয়ে সত্যিই অসাধারণ ফলাফল করেছেন।দুই যমজ বোনই লেখাপড়া করেছেন শাহজাদপুর উপজেলার শাহজাদপুর সরকারি মডেল পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ে। জন্ম থেকেই তারা চোখে কম দেখেন। দূরের কিছু দেখতে পান না, কাছ থেকে বই সামনে এনে পড়তে হয়। সব সীমাবদ্ধতা পেছনে ফেলে এই সাফল্য তাদের বড় এক অর্জন।শিক্ষার্থী আফিয়া আক্তার বলেন, আমার লেখাপড়ার ক্ষেত্রে চোখের সমস্যাটাই ছিল সবচেয়ে বড় বাধা। বোর্ডে লেখা ঠিকমতো দেখতে পেতাম না। স্কুলে যাওয়ার সময় রাস্তা পার হতে ভয় লাগত। অনেক কষ্ট করে পড়ালেখা চালিয়ে গেছি।ভবিষ্যত পরিকল্পনা নিয়ে তিনি আরও বলেন, ভালো কলেজে ভর্তি হয়ে এইচএসসিতেও ভালো ফল করতে চাই। এরপর বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করে বিসিএস দিয়ে একজন শিক্ষক হতে চাই।অপর যমজ বোন ইভা আক্তার বলেন, আমার দৃষ্টিশক্তির সমস্যা সবসময় পড়াশোনার পথে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে, তবে কখনো মনোবল ভাঙেনি। বই দূর থেকে পড়তে পারি না, খুব কাছে এনে পড়তে হয়। স্কুলে যাওয়া, রাস্তা পার হওয়া - সব কিছুতেই সমস্যায় পড়েছি। অনেক কষ্ট করেছি, তবুও থেমে থাকিনি। আমার স্বপ্ন বিসিএস ক্যাডার হবো।তাদের বাবা প্রকৌশলী গোলাম আক্তার বলেন, আমার দুই মেয়ে অনেক পরিশ্রম করে আজকের এই অবস্থানে এসেছে। ওদের স্কুলে যাওয়া খুবই কঠিন ছিল। আমি বা ওদের মা হাতে ধরে স্কুলে নিয়ে যেতাম। অফিস থেকে ফিরে ক্লান্ত হলেও কোচিং থেকে আনতাম। ওদের বন্ধু-বান্ধবীরাও অনেক সাহায্য করেছে। রাত ১২টা বা ১টা পর্যন্ত পড়েছে। আমি বলতাম, এত রাত পর্যন্ত পড়লে চোখের অবস্থা আরও খারাপ হবে। কিন্তু ওরা বলতো, ‘পড়াশোনা না করলে কিছুই হবে না’। আমি চাই ওরা ভালো কলেজে ভর্তি হোক, বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করুক এবং বিসিএস দিয়ে ক্যাডার হোক।দুই বোনের মা তানিয়া শাবনাজ বলেন, ছোটবেলা থেকেই চোখে সমস্যা ছিল। তাই বাসায় আলাদা দুইজন শিক্ষক রাখা হয়েছিল। ওরা পড়াশোনা ছাড়া কিছু বোঝে না। আমরা চেষ্টা করেছি সাহস দিতে, কিন্তু ওরা নিজেদের জন্য যেভাবে লড়েছে, সেটা অনেক বড় ব্যাপার। আমি ওদের ফলাফলে খুব খুশি। দোয়া করি, যেন সামনে আরও ভালো করে।শাহজাদপুর সরকারি মডেল পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের ইংরেজি শিক্ষক ফারজানা ইয়াসমিন বলেন, দুই বোনই মানবিক বিভাগ থেকে জিপিএ-৫ পেয়েছে। ওরা চোখে কম দেখে, কিন্তু পড়াশোনায় চমৎকার। ইংরেজির মতো বিষয়ে ২০০ নম্বরের মধ্যে ১৯৫ পেয়েছে। যদি সঠিকভাবে সহায়তা পায়, তাহলে বিসিএসের স্বপ্ন বাস্তব হবেই।গত কয়েক বছরের তুলনায় এবারের এসএসসি পরীক্ষার ফলাফলে উল্লেখযোগ্যভাবে ফলাফল কমে গেলেও দৃষ্টিপ্রতিবন্ধকতা কোনো শিক্ষার্থীর স্বপ্ন থামিয়ে দিতে পারে না - যমজ এই দুই বোনের সাফল্য সেই বার্তাই আবারও দৃঢ়ভাবে প্রমাণ করেছে।

The Dhaka News Bangla


কপিরাইট © ২০২৫ The Dhaka News Bangla । সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত