সোমবার, ১৪ জুলাই ২০২৫
The Dhaka News Bangla

গাজায় খাবারের অপেক্ষায় দাঁড়ানো ৩৪ জনসহ আরও ১১০ ফিলিস্তিনি নিহত

গাজায় খাবারের অপেক্ষায় দাঁড়ানো ৩৪ জনসহ আরও ১১০ ফিলিস্তিনি নিহত
ছবি: সংগৃহীত

ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা অঞ্চলে ইসরায়েলের হামলায় একদিনে আরও কমপক্ষে ১১০ ফিলিস্তিনি প্রাণ হারিয়েছেন। নিহতদের মধ্যে ৩৪ জন সহায়তাপ্রার্থী ছিলেন, যারা খাবারের জন্য অপেক্ষা করার সময় হামলার শিকার হন।

রোববার (১৩ জুলাই) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা।

সংবাদমাধ্যমটি বলছে, গাজায় শনিবার ইসরায়েলি বাহিনীর হামলায় অন্তত ১১০ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে সেখানকার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। নিহতদের মধ্যে ৩৪ জন দক্ষিণাঞ্চলীয় রাফাহ শহরের হিউম্যানিটারিয়ান ফাউন্ডেশনের (জিএইচএফ)-এর সামনে খাবারের জন্য লাইনে দাঁড়িয়েছিলেন। এই প্রতিষ্ঠানটি যুক্তরাষ্ট্র-সমর্থিত একটি সহায়তা সংস্থা। 

রাফাহর আল-শাকুশ এলাকায় এই হামলার সময় প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, ইসরায়েলি সেনারা সরাসরি লাইনে দাঁড়িয়ে থাকা মানুষের দিকে গুলি চালিয়েছে। জাতিসংঘ ও মানবাধিকার সংগঠনগুলো আগেই এই সহায়তা কেন্দ্রগুলোকে “মৃত্যুকূপ” বা “মানব হত্যাযন্ত্র” হিসেবে চিহ্নিত করেছিল।

হামলা থেকে বেঁচে ফেরা সামির শায়াত নামে এক ব্যক্তি বলেন, “যে ব্যাগে খাবার নেওয়ার কথা ছিল, সেটাই হয়ে গেল মরদেহ মোড়ানোর কাপড়। ওরা আমাদের নিঃসন্দেহে মৃত্যুফাঁদে ফেলেছে।”

মোহাম্মদ বারবাখ নামে আরেকজন জানান, গুলি চালিয়েছিল ইসরায়েলি স্নাইপাররা। তিনি বলেন, “ওরা আমাদের প্রতারিত করে। আগে খাবারের ব্যাগ হাতে দিতে দেয়, তারপর শিকারি যেমন হাঁসকে গুলি করে, তেমন করে গুলি চালায়।”

আল জাজিরার প্রতিবেদক তারেক আবু আজ্জুম জানান, ইসরায়েলি সেনারা কোনো ধরনের সতর্কতা ছাড়াই গুলি চালিয়েছে। বর্তমানে জিএইচএফ-এর শুধুমাত্র একটি কেন্দ্র চালু আছে রাফাহতে। ফলে হাজার হাজার মানুষকে সেখানেই সহায়তার আশায় যেতে হচ্ছে।

গাজায় ডাক্তারদের তথ্যমতে, মে মাসের শেষ থেকে জিএইচএফ কেন্দ্রগুলোতে এখন পর্যন্ত ৮০০’র বেশি ফিলিস্তিনি নিহত এবং ৫ হাজার মানুষ আহত হয়েছেন। অধিকাংশের মাথা ও পায়ে গুলি লেগেছে। আল-আকসা হাসপাতালের মুখপাত্র খালিল আল-দেগরান বলেন, “আমরা হাসপাতালে এত আহত মানুষের চাপ সামলাতে পারছি না। ওষুধ ও চিকিৎসা সরঞ্জামের ভয়াবহ ঘাটতি চলছে।”

এছাড়া গাজা শহরের তুফাহ এলাকায় জাফা স্ট্রিটে এক বাসায় বোমা হামলায় ৪ জনসহ মোট ১৪ জন নিহত হন। উত্তর গাজার জাবালিয়ায় দুটি আবাসিক ভবনে হামলায় ১৫ জন নিহত হন। শাতি শরণার্থী শিবিরে হামলায় আরও ৭ জন মারা যান। বেইত হানুন শহরে ইসরায়েলি বাহিনী উত্তর-পূর্ব অংশে ৫০টির মতো বোমা ফেলেছে। গত ৪৮ ঘণ্টায় ইসরায়েলি বাহিনী গাজায় ২৫০ বার হামলা চালিয়েছে বলে জানিয়েছে আইডিএফ।

এদিকে গাজায় ৬৭ জন শিশু অপুষ্টিতে মারা গেছে বলে জানিয়েছে স্থানীয় মিডিয়া অফিস। ৫ বছরের কম বয়সী সাড়ে ৬ লাখ শিশু এখন মারাত্মক অপুষ্টির ঝুঁকিতে রয়েছে। খাবার ও ওষুধের তীব্র সংকটে গত কয়েক দিনে বহু মানুষের মৃত্যু হয়েছে।

অন্যদিকে হামাস ও ইসরায়েলের মধ্যকার আলোচনায় অগ্রগতি থেমে গেছে। আলোচনায় মূল বাধা— ইসরায়েলি সেনারা কতটা অংশ থেকে সরে যাবে, সেই মানচিত্র নিয়ে। হামাস বলছে, ইসরায়েলের প্রস্তাব অনুসারে রাফাহসহ প্রায় ৪০ শতাংশ এলাকা ইসরায়েলের দখলে থেকে যাবে, যা তারা মেনে নেবে না।

হামাসের এক প্রতিনিধি বলেছেন, “এই মানচিত্রে সম্মতি দিলে গাজার অর্ধেক পুনরায় দখলকৃত এলাকা হিসেবে বৈধতা পাবে, আর পুরো ভূখণ্ড বিচ্ছিন্ন বন্দিশিবিরে পরিণত হবে।”

মানবিক সহায়তা প্রবেশ এবং যুদ্ধ বন্ধের নিশ্চয়তা নিয়েও দুই পক্ষের মধ্যে মতবিরোধ রয়েছে। এক ফিলিস্তিনি সূত্র জানিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্র আরও জোরালোভাবে হস্তক্ষেপ করলে অচলাবস্থা কাটতে পারে। তবে আলোচনা এখনও পুরোপুরি থেমে যায়নি। কাতারে রোববার থেকে আলোচনায় থাকবে ইসরায়েল ও হামাসের প্রতিনিধিদল।

বিষয় : নিহত গাজা ফিলিস্তিনি

যুক্ত থাকুন দ্যা ঢাকা নিউজের সাথে

The Dhaka News Bangla

সোমবার, ১৪ জুলাই ২০২৫


গাজায় খাবারের অপেক্ষায় দাঁড়ানো ৩৪ জনসহ আরও ১১০ ফিলিস্তিনি নিহত

প্রকাশের তারিখ : ১৩ জুলাই ২০২৫

featured Image
ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা অঞ্চলে ইসরায়েলের হামলায় একদিনে আরও কমপক্ষে ১১০ ফিলিস্তিনি প্রাণ হারিয়েছেন। নিহতদের মধ্যে ৩৪ জন সহায়তাপ্রার্থী ছিলেন, যারা খাবারের জন্য অপেক্ষা করার সময় হামলার শিকার হন।রোববার (১৩ জুলাই) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা।সংবাদমাধ্যমটি বলছে, গাজায় শনিবার ইসরায়েলি বাহিনীর হামলায় অন্তত ১১০ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে সেখানকার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। নিহতদের মধ্যে ৩৪ জন দক্ষিণাঞ্চলীয় রাফাহ শহরের হিউম্যানিটারিয়ান ফাউন্ডেশনের (জিএইচএফ)-এর সামনে খাবারের জন্য লাইনে দাঁড়িয়েছিলেন। এই প্রতিষ্ঠানটি যুক্তরাষ্ট্র-সমর্থিত একটি সহায়তা সংস্থা। রাফাহর আল-শাকুশ এলাকায় এই হামলার সময় প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, ইসরায়েলি সেনারা সরাসরি লাইনে দাঁড়িয়ে থাকা মানুষের দিকে গুলি চালিয়েছে। জাতিসংঘ ও মানবাধিকার সংগঠনগুলো আগেই এই সহায়তা কেন্দ্রগুলোকে “মৃত্যুকূপ” বা “মানব হত্যাযন্ত্র” হিসেবে চিহ্নিত করেছিল।হামলা থেকে বেঁচে ফেরা সামির শায়াত নামে এক ব্যক্তি বলেন, “যে ব্যাগে খাবার নেওয়ার কথা ছিল, সেটাই হয়ে গেল মরদেহ মোড়ানোর কাপড়। ওরা আমাদের নিঃসন্দেহে মৃত্যুফাঁদে ফেলেছে।”মোহাম্মদ বারবাখ নামে আরেকজন জানান, গুলি চালিয়েছিল ইসরায়েলি স্নাইপাররা। তিনি বলেন, “ওরা আমাদের প্রতারিত করে। আগে খাবারের ব্যাগ হাতে দিতে দেয়, তারপর শিকারি যেমন হাঁসকে গুলি করে, তেমন করে গুলি চালায়।”আল জাজিরার প্রতিবেদক তারেক আবু আজ্জুম জানান, ইসরায়েলি সেনারা কোনো ধরনের সতর্কতা ছাড়াই গুলি চালিয়েছে। বর্তমানে জিএইচএফ-এর শুধুমাত্র একটি কেন্দ্র চালু আছে রাফাহতে। ফলে হাজার হাজার মানুষকে সেখানেই সহায়তার আশায় যেতে হচ্ছে।গাজায় ডাক্তারদের তথ্যমতে, মে মাসের শেষ থেকে জিএইচএফ কেন্দ্রগুলোতে এখন পর্যন্ত ৮০০’র বেশি ফিলিস্তিনি নিহত এবং ৫ হাজার মানুষ আহত হয়েছেন। অধিকাংশের মাথা ও পায়ে গুলি লেগেছে। আল-আকসা হাসপাতালের মুখপাত্র খালিল আল-দেগরান বলেন, “আমরা হাসপাতালে এত আহত মানুষের চাপ সামলাতে পারছি না। ওষুধ ও চিকিৎসা সরঞ্জামের ভয়াবহ ঘাটতি চলছে।”এছাড়া গাজা শহরের তুফাহ এলাকায় জাফা স্ট্রিটে এক বাসায় বোমা হামলায় ৪ জনসহ মোট ১৪ জন নিহত হন। উত্তর গাজার জাবালিয়ায় দুটি আবাসিক ভবনে হামলায় ১৫ জন নিহত হন। শাতি শরণার্থী শিবিরে হামলায় আরও ৭ জন মারা যান। বেইত হানুন শহরে ইসরায়েলি বাহিনী উত্তর-পূর্ব অংশে ৫০টির মতো বোমা ফেলেছে। গত ৪৮ ঘণ্টায় ইসরায়েলি বাহিনী গাজায় ২৫০ বার হামলা চালিয়েছে বলে জানিয়েছে আইডিএফ।এদিকে গাজায় ৬৭ জন শিশু অপুষ্টিতে মারা গেছে বলে জানিয়েছে স্থানীয় মিডিয়া অফিস। ৫ বছরের কম বয়সী সাড়ে ৬ লাখ শিশু এখন মারাত্মক অপুষ্টির ঝুঁকিতে রয়েছে। খাবার ও ওষুধের তীব্র সংকটে গত কয়েক দিনে বহু মানুষের মৃত্যু হয়েছে।অন্যদিকে হামাস ও ইসরায়েলের মধ্যকার আলোচনায় অগ্রগতি থেমে গেছে। আলোচনায় মূল বাধা— ইসরায়েলি সেনারা কতটা অংশ থেকে সরে যাবে, সেই মানচিত্র নিয়ে। হামাস বলছে, ইসরায়েলের প্রস্তাব অনুসারে রাফাহসহ প্রায় ৪০ শতাংশ এলাকা ইসরায়েলের দখলে থেকে যাবে, যা তারা মেনে নেবে না।হামাসের এক প্রতিনিধি বলেছেন, “এই মানচিত্রে সম্মতি দিলে গাজার অর্ধেক পুনরায় দখলকৃত এলাকা হিসেবে বৈধতা পাবে, আর পুরো ভূখণ্ড বিচ্ছিন্ন বন্দিশিবিরে পরিণত হবে।”মানবিক সহায়তা প্রবেশ এবং যুদ্ধ বন্ধের নিশ্চয়তা নিয়েও দুই পক্ষের মধ্যে মতবিরোধ রয়েছে। এক ফিলিস্তিনি সূত্র জানিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্র আরও জোরালোভাবে হস্তক্ষেপ করলে অচলাবস্থা কাটতে পারে। তবে আলোচনা এখনও পুরোপুরি থেমে যায়নি। কাতারে রোববার থেকে আলোচনায় থাকবে ইসরায়েল ও হামাসের প্রতিনিধিদল।

The Dhaka News Bangla

প্রতিষ্ঠাতা ও প্রকাশক : তাসকিন আহমেদ রিয়াদ 

কপিরাইট © ২০২৫ The Dhaka News Bangla । সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত