
নোয়াখালীর দ্বীপ উপজেলা হাতিয়ার তমরুদ্দি ইউনিয়নে ঘাট ইজারার নামে চলছে প্রকাশ্যে চাঁদাবাজির মহোৎসব। সরকার পতনের পর নতুন এক দখলদার চক্র পুরো ঘাট ব্যবসাকে পরিণত করেছে চাঁদা আদায়ের যন্ত্রে। উদাহরণস্বরূপ আগে যেখানে ৫ টাকায় ঘাট ব্যবহার হতো, সেখানে এখন গুণতে হচ্ছে ১০ থেকে ১৫ টাকা পর্যন্ত—তাও আবার চোখে চোখ রেখে, গলায় চাঁদার তালা ঝুলিয়ে। তমরুদ্দি ইউনিয়নের ঘাটগুলোতে যে চাঁদার রাজত্ব চলছে, তা শুধু একটি ইউনিয়নের সমস্যা নয়—এটি পুরো উপজেলায় দুর্বৃত্তায়নের একটি নগ্ন উদাহরণ। প্রশাসনের নীরবতা ও রাজনৈতিক প্রশ্রয়ে দিন দিন ভয়াবহ করে তুলেছে।
জানা যায়, হাতিয়ার তমরুদ্দিন ঘাট ১ কোটি টাকার ঘাট। কিন্তু ৩ কোটি ৩০ লাখ টাকায় ইজারা নিয়েছেন মোহাম্মদ মনির উদ্দিন, মেজবাহ উদ্দিন শামীম ও মোছলেহ উদ্দিন নিজাম চৌধুরী। অনেকেই বলেছেন ইজারা যাই হোক টোল যাতে না বাড়ে। ভুক্তভোগীরাও তাই চেয়েছিলেন।
এবার দেখে নিন- আগের চিত্র আর বর্তমানের চিত্র
* আগে হাতিয়ার ব্যাবসায়ীদের কাছ থেকে কার্টুন প্রতি নেয়া হতো ৫৫ টাকা এখন ৮০ টাকা।
* চাউল, আটা, ময়দা,চিনি ও ৫০ কেজি ওজনের বস্তা আগে রেট ছিল ২টাকা -এখন ৫টাকা।
* রড টন আগে ২০০টাকা এখন ৩০০।
* গ্যাস সিলিন্ডার আগে ৩ টাকা এখন ৭ টাকা।
* প্রতিটি জাহাজের গুদি খাজনা ছিলো ৫০০ টা এখন ১৫০০ টাকা!
* হাতিয়ার যত উন্নয়ন কাজের সিমেন্ট সহ সমস্ত আসবাবপত্র নাম মাত্র মূল্যে ইজারা নেওয়া হতো ১ বা ২ টাকা এখন ৫ টাকা।
* মসজিদ মাদ্রাসা এবং সামাজিক উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের মালামালের ইজারা ফ্রি ছিলো-এখন ৫ টাকা।
* কৃষি নির্ভর হাতিয়ার সমস্ত রবি শস্য তমরদ্দি ঘাট হয়ে বরিশাল, চাঁদপুর, চিটাগং, মুন্সিগঞ্জসহ দেশের সর্বত্র রপ্তানি হয়। আগে ইজারা ছিলো ২ টাকা এখন ১৫ টাকা।
* নিত্যপ্রয়োজনীয় পন্য আলুর বস্তা ছিলো ২৫ টাকা, এখন ৩৫ টাকা। এক কথায় তারা ভয় দেখিয়ে টাকা আদায়, অভিযোগে মুখর জনতা
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ভুক্তভোগীর অভিযোগ—’ আমরা পুরাতন ইজারার সময় যেই রেটে মালামাল নিতাম এখন সেটা তিন গুন এর চাইতেও বেশি নিচ্ছে এবং ভয় দেখিয়ে জোর করে টাকা আদায় করে। না দিলে মাল নামতে দেয় না, কাগজ ফেলে দেয়, গালিগালাজ করে। প্রশাসন চোখ বুঝে আছে।”এটি ঘাট নয়, যেন প্রভাবশালীদের চাঁদার বাজার
স্থানীয়রা বলছেন, ঘাট ইজারা এখন আর সরকারি রাজস্বের উৎস নয়, বরং কিছু রাজনৈতিক নামধারী দুর্বৃত্তের ব্যক্তিগত আয়ের খনি। ইজারার নামে তারা জনগণের পকেট কেটে নিচ্ছে লক্ষ লক্ষ টাকা, অথচ দাফতরিক কাগজপত্র, সরকারি রেট বা টেন্ডার—সবই এক রহস্য!ভয় নয়, এবার সময় এসেছে প্রতিরোধের!
এই চাঁদাবাজি আর দখলদারিত্ব বন্ধে প্রশাসনকে তৎপর হতে হবে—এটাই ভুক্তভোগী মানুষের দাবি। দরকার হলে এলাকাবাসী রাজপথে নামবে, কারণ ঘাট ইজারার নামে এই জুলুম আর সহ্য করা হবে না।
এই বিষয়ে হাতিয়া তমরুদ্দি মূল ঘাট ইজারাদার মোহাম্মদ মনির উদ্দিন থেকে জানতে চাইলে তিনি , সব অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন আমরা অতিরিক্ত কোন টাকা নিচ্ছি না, বিআইডব্লিউটিএ থেকে যেই রেট প্রধান করছে সেই রেট অনুযায়ী নেওয়া হচ্ছে।
ইজারাদারের ছোট ভায়রা-ভাই পার্টনার মেজবাহ উদ্দিন শামীমকে , একাধিকবার মুঠোফোনে চেষ্টা করলেও সংযোগ পাওয়া যায়নি তাই তার মতামত নেওয়া সম্ভব হয়নি।
আরেক পার্টনার মোছলেহ উদ্দিন নিজাম চৌধুরী বলেন, আগের ইজারার চাইতে এখনকার ইজারা বেশি টাকায় নেওয়া, সেই হিসেবে রেট তো বেশি হবেই আর আমরা ব্যাবসায়ীদের সঙ্গে আলাপ আলোচনা করেই নির্ধারণ করেছি। তার পর ও দেখা যাবে আমাদের ১ কোটি ৫০ লক্ষ টাকার মতো লোকসান হবে।
১ কোটি টাকার ঘাট কেন ৩ কোটি ৩০ লক্ষ টাকা দিয়ে নিয়ে ব্যাবসায়ীদের থেকে অতিরিক্ত টাকা আদায় করছেন জবাবে বলেন, আমরা যদি ঘাটের ইজারা না নিতাম তাহলে তমরুদ্দি ইউনিয়নে প্রতিনিয়ত মারামারি খুনাখুনি হতো। তবুও আমরা চাই তমরুদ্দি ইউনিয়ন সহ হাতিয়ার মানুষ ভালো থাকুক।
হাতিয়া থানার ওসি আজমল হুদা বলেন, “আমাদের কাছে এখনো লিখিত কোনো অভিযোগ আসেনি। লিখিত অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
হাতিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ আলাউদ্দিন জানান “ঘাট ইজারা নিয়ে যদি কেউ অতিরিক্ত আদায় করে, সেটা অনিয়ম। বিষয়টি যাচাই করে দেখা হবে।
মঙ্গলবার, ০৮ জুলাই ২০২৫
প্রকাশের তারিখ : ০৭ জুলাই ২০২৫
যুক্ত থাকুন দ্যা ঢাকা নিউজের সাথে