
সুবর্ণচরে নোয়াখালী বিজ্ঞান প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের নামে বরাদ্দকৃত মোহাম্মদপুর ইউনিয়নের ৩০৬ নং উরিরচর মৌজার ১নং খাস খতিয়ানভুক্ত “ভূমি সমুদ্র বিজ্ঞান ও সামুদ্রিক সম্পদ ইনস্টিটিউট” স্থাপনের জন্য প্রস্তাবিত ভূমিতে চলছে অনাবাদে দখল কার্যক্রম।
সরেজমিনে দেখা যায়- সুবর্ণচর উপজেলার ৮নং মোহাম্মদপুর ইউনিয়নের ৭নং ও ৯নং ওয়ার্ডের শাহাজান প্রজেক্টে বিএনপি ও জামায়াত নেতাদের চলছে দখল কার্যক্রম। এর মধ্যে বেশির ভাগই বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক নাসির উদ্দিন নাসিরের সমার্থক। যার কারণে তাদের কে বাঁধা দেওয়ার সাহস কেউ ই পাচ্ছে না।
সরেজমিনে আরো দেখা যায় জামায়াত নেতা বেলায়েত সেলিমের আয়ত্ত্বে রয়েছে প্রায় বেশ কয়েক একর জমি এবং অভিযোগ রয়েছে তার সমার্থকদের কেও টাকার বিনিময়ে দেওয়া হয়েছে জমি। সেলিম ছাড়াও ৯নং ওয়ার্ড বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক বেলাল কেরানি,ও নুর উদ্দিন সর্দার বাংলাদেশ ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দীন নাছিরের নাম বিক্রি করে কিছু সন্ত্রাসী বাহিনী নিয়ে প্রতিনিয়ত ৯নং ওয়ার্ডের রাজত্ব কায়েম করে আসছে।স্থানীয়রা তাকে কিছু বলার কোনো সাহস পাচ্ছে না। যার ফলে দলীয় প্রভাব খাটিয়ে তারা ৯নং ওয়ার্ডের বেশ কয়েকটি খাস জমি ও প্রজেক্ট দখলে নিয়েছেন। এবং তাদের গ্রুপ ভারী করতে বিভিন্ন আ.লীগের লোকজন কেও প্রজেক্ট দখলের সুযোগ দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে।
অন্য দিকে ৭ নং ওয়ার্ডের আবু সুফিয়ান ও ফোরকান উদ্দিন মিন্টু ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক নাসির উদ্দিন নাসিরের সমার্থক হওয়ায় তারা দলীয় প্রভাব খাটিয়ে চরের বিভিন্ন জমি দখলের সাথে সংযুক্ত রয়েছেন। উল্লেখিত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে সুবর্ণচর উপজেলা নির্বাহী অফিসারের নিকট একটি অভিযোগ দেওয়া হয়েছে।
অভিযোগ পত্রে স্বাক্ষর করা ব্যক্তিরা জানান- আমাদের মোহাম্মদপুর ইউনিয়নের একটি আলোচিত প্রজেক্ট হলো ৭নং ওয়ার্ডের চর লক্ষী মৌজার “শাহাজাহান প্রজেক্ট”। যা বিগত কয়েক বছর ধরে চাষাবাদ শূণ্য হয়ে পড়ে আছে।বিগত আ.লীগের আমলে শত চেষ্টা করে ও প্রশাসনের সহযোগিতায় এটি সফল করতে পারে নি আ.লীগের দোসরেরা। তারা এই প্রজেক্ট দখলের চেষ্টা করলে ও প্রশাসনের হস্তক্ষেপে এটি নিয়ন্ত্রণে এসে যায়। আর এই প্রজেক্টের প্রায় তিন ভাগের এক ভাগ নোয়াখালী বিজ্ঞান প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য বরাদ্দকৃত জমি। তাদের জমির সীমানা নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে সাইনবোর্ড । গত বছর উপজেলা নির্বাচনের পর স্থানীয় আ.লীগ নেতা আজাদ চেয়ারম্যান বহু চেষ্টা করে ও দখল আনতে পারে নি। এই বিষয় টি সুবর্ণচর উপজেলা ভুমি অফিস জেলা ভুমি অফিস এবং জেলা প্রশাসক ও উপজেলা প্রশাসন জানেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ব্যক্তি জানান- ৫ আগস্টের পর এই প্রজেক্ট একেক জনে একেক ভাবে দখলের চেষ্টা করে আসছে। শুরুতে ইসমাইল মেম্বার কয়েক মাস রাজত্ব করলে ও শেষ মেষ তাকে বিতাড়িত করে এই প্রজেক্ট নিয়ন্ত্রণে রাখছেন মোহাম্মদপুর ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক সভাপতি নুরুল ইসলাম আজাদ। এখন যা হচ্ছে তার নিয়ন্ত্রণে হচ্ছে যার কারণে কেউই কিছু বলতেছে না।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক ব্যক্তি জানান- এই বছরে শুকনো মৌসুমে ইরি ধান চাষের সময় কিছু টাকার বিনিময়ে বিএনপির নাম ভাঙিয়ে চাষাবাদ শুরু করে একটি পক্ষ। তাছাড়া এবার বর্ষা মৌসুমে আমন ধান চাষের কথা বলে অনাবাদে চলছে এই প্রজেক্ট দখলের চেষ্টা। জমি দেওয়ার নামে নেওয়া হচ্ছে টাকা।টাকার বিনিময়ে দেওয়া হয় জমি অথচ এই জমি টি শাহাজাহান সাহেবের খতিয়ান ভুক্ত জমি এবং কিছু অংশ সরকারি খাস খতিয়ান ভুক্ত জমি।
সরে জমিনে দেখা যায় নোয়াখালী বিজ্ঞান প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের বরাদ্দকৃত জমিও বাদ দেয়নি তারা। বিশ্ব বিদ্যালয়ের বরাদ্দকৃত জমি গুলো চাষ দিয়ে নিয়ন্ত্রণে এনেছে তারা। বিশ্ব বিদ্যালয়ের জমি গুলোর সীমানা নির্ধারণ করে তারা ভিন্ন ভিন্ন সাইনবোর্ড লাগিয়ে দিয়েছেন। কিন্তু কার থেকে অনুমতি নিয়ে চাষ করছেন এরকম প্রশ্ন করা হলে তারা প্রতিবেদকের কল কেটে দেন। প্রযুক্তির জমি দখলের বিষয়ে জানা যায় কেউ প্রতিবাদ করলে তাকে কথা বলার সুযোগ দেয় না এটি প্রভাবশালী মহল।।
এই বিষয়ে আমরা সুবর্ণচর উপজেলা কৃষক দলের সভাপতি মোহাম্মদ শাহাদাত হোসেন কে মুঠোফোনে কল দিই তিনি জানান- বিষয় টা আমাকে নেতাকর্মীরা জানিয়েছেন তারা নাকি একটি অভিযোগ ইউএনও অফিসে দিয়েছেন। কিন্তু কারা দখল করতেছে সেটা আমি তেমন ভালো করে জানি না। আপনারা এসে তদন্ত করে যান।যারা জড়িত রয়েছে তাদের বিরুদ্ধে তথ্য উদঘাটন করেন। যদি বিএনপির কেউ জড়িত থাকে দল এবং প্রশাসন তাদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।
মোহাম্মদপুর ইউনিয়নের বিএনপির এক নেতা জানান- আমরা চাই এটি প্রশাসনের নিয়ন্ত্রণে রাখা হোক।নয়তো এই জমি নিয়ে অনেক হানাহানি এবং অনেক নিরীহ মানুষের প্রাণ হানি ও ঘটতে পারে। তাই সর্ব বিবেচনা করে অতিদ্রুত বিষয়টি নজরে আনা উচিত বলে মনে করছি।
তাছাড়া গতকাল সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায় বিজ্ঞান প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে বরাদ্দকৃত জমি ৭নং ওয়ার্ডের (মোডা)ফরিদের বাড়ির পশ্চিম পাশের প্রজেক্ট স্থানীয় যুবদল নেতা আবু তাহের খোকনের দখলে,এর একটু দক্ষিন পাশে জামাল সওদাগরের বাড়ির পশ্চিম পাশে জামায়াত নেতা বেলায়েত সেলিম ও বিএনপি নেতা আবু সুফিয়ানের দখলের এর পর পুরো বিস্তৃত প্রজেক্ট ৯নং ওয়ার্ড বিএনপি সাবেক সাধারণ সম্পাদক বেলাল কেরানি ও নুর উদ্দিন সর্দার ও মোহাম্মদপুর ইউনিয়নের কয়েক জন নেতার দখলে। স্থানীয় সূত্র বলছে এই জমি যারা চাষ করতেছে তাদের থেকে টাকা নিয়ে ইউনিয়ন বিএনপির বিভিন্ন নেতাকে দেওয়া হচ্ছে।
খাস জমি ছাড়াও শাহজাহান প্রজেক্টের ছোট ছোট মাছ চাষের প্রজেক্ট গুলো ও বিএনপি নেতাদের দখলে। বলতে গেলে পুরো প্রজেক্ট এখন বিএনপি নেতাদের দখলে। স্থানীয় নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক ব্যক্তিদের নিকট প্রাপ্ত তথ্য এটি।
তাছাড়া নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আরেক ব্যক্তি জানান- এক সময় আ.লীগ এই প্রজেক্ট খাইতো এখন বিএনপির নেতারা খাচ্ছে। বলতে গেলে যে যার খুশি মতো খাচ্ছে। কেউ প্রতিবাদ করলেই সমস্যা।
আরেক মহিলা জানান- আমার স্বামী মারা গেছে আমার ছেলে এই প্রজেক্টে বাগা গরু পালন করে আমার সংসার চালাচ্ছে এখন তো পুরো প্রজেক্ট চাষ দিয়ে দিচ্ছে।
বিএনপির সাবেক সভাপতি কামাল উদ্দিন জানান- আমি ওয়ার্ডের দ্বায়িত্বে আছি। কিন্তু তারা আমাকে মানে না, তারা নাকি বড় নেতাদের পাওয়ারে চলে যার কারণে মন যা চাই তাই করে।
প্রজেক্ট দখলের সাথে সংশ্লিষ্ট মোহাম্মদপুর ইউনিয়নের বেশ কয়েক জনের নাম রয়েছে এর মধ্যে উক্ত জমি মোহাম্মদপুর ইউনিয়নের ৯নং ওয়ার্ডের মোঃ মোবাশ্বের আহমদের ছেলে বেলাল কেরানি (৫০), নুর ইসলামের ছেলে নুর উদ্দিন সর্দার (৫২),মোহাম্মদপুর ইউনিয়নের ৭নং ওয়ার্ডের শেখ ফরিদের ছেলে আবু তাহের খোকন (৪৫), জামায়াত নেতা মৃত আব্দুল কুদ্দুসের ছেলের বেলায়েত সেলিম (৫০),মৃত ইলিয়াস সর্দারের ছেলে ফোরকান উদ্দিন মিন্টু,মাওলানা নুর উল্যার ছেলে আবু সুফিয়ান (৩২),এর সাথে আরো সহযোগী হিসেবে রয়েছেন মোহাম্মদপুর ইউনিয়নের ৭নং ওয়ার্ডের, মোঃ ফারুক (২৮),মোঃ আরিফ (৩০),মোঃ মাসুদ (২৭),মোঃ দিদারুল আলম, মোঃ সাহাব উদ্দিন,৫নং ওয়ার্ড সাহাব উদ্দিন সর্দার (৫২),ছায়দল হক- মাষ্টার(চরক্লার্ক ইউনিয়ন) মোঃ ৯নং ওয়ার্ড যুবদলের সাধারণ সম্পাদক সুজন, আব্দুল খালেক,রাছেল, আবু তাহের, ওয়ার্ডের চান মিয়া, সহ আরো অনেকে।
এতে এলাকা বাসী সম্মিলিত হয়ে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে সুবর্ণচর উপজেলা নির্বাহী অফিসারের নিকট গত ২ জুলাই একটি অভিযোগ দায়ের করেন।
এই বিষয়ে অভিযুক্ত বেলাল কেরানির সাথে কথা বললে তিনি সাংবাদিক কিছু বলার সময় নাই এবং এটা জেলা উপজেলা নেতারা জানেন এবং তিনি রাজনীতি করছেন। দখলের বিষয় জানতে চাইলে তিনি দখল নয় রাজনীতি বলে কেটে দেন এর পর আর যোগাযোগ করা হয়নি।
অভিযুক্ত নুর উদ্দিন সর্দারের সাথে কথা বলতে মুঠোফোনে একাধিক কল দিয়ে ও কলে পাওয়া যায় নি। পরবর্তী যোগাযোগ করলে তিনি সংযুক্ত নেই এবং এসব অভিযোগ ফু দিলে চলে যাবে বলে প্রতিবেদকের সাথে কথা বলেন। এবং কারা করতেছে সেটি জিজ্ঞেসা করলে তিনি বলেন আগে যারা করছে তারা এখনো করতেছে তিনি কাউকে অনুমতি দেন নাই।অন্য দিকে তার কথা অনুযায়ী মাঠ পর্যায়ে গেলে সেখানে যারা চাষ করছে বেশিরভাগ তার অনুসারী।
অভিযুক্ত আবু সুফিয়ান কে কল দিলে তিনি নিউজ থেকে তার নাম বাদ দেওয়ার জন্য সাংবাদিকদের অনুরোধ করেন।
জামায়াত নেতা বেলায়েত সেলিমের সাথে বললে তিনি বিষয় টা অস্বীকার করলেও বলেন, দখলকৃত জমিতে এক সময় তার গরু মইষ, ভেড়ার বসবাস ছিল, যার দখল সূত্রে তিনি এই জমি দখলে নিয়েছেন।
সুবর্ণচর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ছেনমং রাখাইন জানান- বিষয়টা শুনেছি ঘটনাস্থলে গিয়ে বিস্তারিত জানা যাবে। এবং পরবর্তী তার সাথে যোগাযোগ করতে চাইলে একাধিক কল দিলে ও কল ধরেন নাই।
সুবর্ণচর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রাবেয়া আফসার সায়মা জানান- বিষয় টা আপনার থেকে শুনেছি যদি ও আমি এখানে নতুন এসেছি যার কারণে এই বিষয়ে ধারণা নেই। বিস্তারিত জেনে আপনাকে জানানো হবে।
সোমবার, ০৭ জুলাই ২০২৫
প্রকাশের তারিখ : ০৭ জুলাই ২০২৫
যুক্ত থাকুন দ্যা ঢাকা নিউজের সাথে