বৃহস্পতিবার, ০৩ জুলাই ২০২৫
The Dhaka News Bangla

হাসপাতালে বসেই এইচএসসি পরীক্ষা দিলেন ইশা

হাসপাতালে বসেই এইচএসসি পরীক্ষা দিলেন ইশা

শরীয়তপুর সরকারি কলেজের মানবিক বিভাগের এইচএসসি পরীক্ষার্থী ইশা আলম (১৮) অদম্য ইচ্ছাশক্তির এক দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। গত শুক্রবার রাতে সিজারিয়ান সন্তান জন্মের দুই দিন পর রোববার (২৯ জুন) সকাল ১০টায় তিনি হাসপাতালেই এইচএসসি দ্বিতীয় লিখিত পরীক্ষায় অংশ নেন।

ইশার পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, শরীয়তপুর সদর উপজেলার তুলাশার গ্রামের মো. শাহআলম সিকদারের মেয়ে ইশা আলমের বিয়ে হয় গত বছর ২৮ জুন একই উপজেলার কাশাভোগ এলাকার মুজিবুর রহমানের ছেলে মাহবুবুর রহমান তুষারের সঙ্গে। তুষার ঢাকার একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। সন্তানসম্ভবা অবস্থায় চলতি এইচএসসি পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছিলেন ইশা। গত বৃহস্পতিবার বাংলা প্রথম পত্র পরীক্ষা দিয়েছিলেন ইশা। পরে গত শুক্রবার (২৭ জুন) রাতে প্রসব বেদনা শুরু হলে তাকে শরীয়তপুর সদর উপজেলার নিপুণ ডায়াগনস্টিক অ্যান্ড ক্লিনিকে ভর্তি করা হয়। ওই রাতেই কন্যাসন্তান জন্ম দেন তিনি। এরপর রোববার সকাল ১০টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত ছিল তার বাংলা ২য় পত্র পরীক্ষা।

ইশার পরীক্ষা কেন্দ্র ছিল সরকারি গোলাম হায়দার খান মহিলা কলেজে। তবে শারীরিক অবস্থার কারণে কলেজের শিক্ষক মো. মাসুম মিয়ার পরামর্শে কলেজ অধ্যক্ষের কাছে ক্লিনিকেই পরীক্ষা দেওয়ার অনুমতি চেয়ে আবেদন করা হয়। অধ্যক্ষের অনুমতি পাওয়ার পর রোববার সকালে একজন মহিলা শিক্ষক ও একজন মহিলা পুলিশ উপস্থিত থেকে নিপুণ ক্লিনিকের বিছানাতেই পরীক্ষার আয়োজন করা হয়।

ইশা আলম বলেন, “আমি আইন পড়তে চাই, বিচারক হয়ে নিপীড়িত নারীদের পাশে দাঁড়াতে চাই। সন্তান জন্মের পরও পরীক্ষা দিতে পেরে আমি আনন্দিত। আল্লাহ, শিক্ষক, পরিবার, সহকর্মী ও চিকিৎসকদের প্রতি আমি কৃতজ্ঞ।”

তিনি আরও বলেন, “গর্ভকালীন সময়েই পরীক্ষার সময় চলে আসে। তবে আমি মনোবল হারাইনি। পরিবারের উৎসাহ ও সহযোগিতায় এই অবস্থাতেও পরীক্ষায় বসার সিদ্ধান্ত নেই। আমি বিশ্বাস করি, মনোবল ধরে রাখলে প্রত্যেক মেয়েই নিজের লক্ষে পৌঁছাতে পারে।”

ইশার মা সুহাদা বেগম বলেন, মেয়ের এমন সাহস আর মনোবল দেখে গর্বিত। এমন অবস্থায়ও যে সে পরীক্ষা দেবে, তা কখনও ভাবিনি। সবাই দোয়া করবেন আমার মেয়ে ও নাতনির জন্য।

ইশার স্বামী মাহবুবুর রহমান তুষার বলেন, ইশা সবসময় পড়াশোনার বিষয়ে আমাকে পাশে থাকতে বলেছে, আমি চেষ্টা করেছি সাপোর্ট দিতে। কিন্তু সন্তান জন্মের পরপরই পরীক্ষা দেবে তা কখনও ভাবিনি। পরে আমি মহিলা কলেজের অধ্যক্ষের কাছে লিখিতভাবে বিষয়টি জানাই। এরপরেই স্যারসহ সকলে ওকে সহযোগিতা করেছেন পরীক্ষা দেওয়ার জন্য। আল্লাহ ওদের সুস্থ রাখুক।

একটি বেসরকারী ক্লিনিকের গাইনি বিশেষজ্ঞ ও কনসালট্যান্ট ডা. হোসনে আরা বেগম রোজী বলেন, ২৭ তারিখ রাতে প্রসববেদনা নিয়ে ইশা আমাদের কাছে এসেছিলেন। তার প্রবল ইচ্ছে ছিল পরীক্ষা দেওয়ার। তার মনের শক্তির কারণে শেষ পর্যন্ত পরীক্ষা দিয়েছে। এখন মা ও মেয়ে দুজনেই সুস্থ আছেন।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে কেন্দ্র সচিব ও সরকারি গোলাম হায়দার খান মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর মো. ওয়াজেদ কামাল বলেন, শিক্ষকরা সবসময় মানবিক। সিজারিয়ান পদ্ধতিতে সন্তান জন্ম দেওয়ার পরও পরীক্ষায় অংশ নেওয়ার অদম্য ইচ্ছা প্রকাশ করে ইশা আলম। বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে কলেজ কর্তৃপক্ষ হাসপাতালে এক নারী শিক্ষক ও নারী পুলিশ সদস্যের উপস্থিতিতে পরীক্ষার ব্যবস্থা করে। ইশার হাতের লেখা ছিল সুন্দর, পরীক্ষাও দিয়েছে ভালো। মা ও নবজাতক দুজনেই সুস্থ। আল্লাহর কাছে প্রার্থনা, একদিন এই শিশুকন্যাও গ্র্যাজুয়েট হয়ে মায়ের স্বপ্ন পূরণ করুক।

বিষয় : হাসপাতাল এইচএসসি পরীক্ষা

যুক্ত থাকুন দ্যা ঢাকা নিউজের সাথে

The Dhaka News Bangla

বৃহস্পতিবার, ০৩ জুলাই ২০২৫


হাসপাতালে বসেই এইচএসসি পরীক্ষা দিলেন ইশা

প্রকাশের তারিখ : ৩০ জুন ২০২৫

featured Image
শরীয়তপুর সরকারি কলেজের মানবিক বিভাগের এইচএসসি পরীক্ষার্থী ইশা আলম (১৮) অদম্য ইচ্ছাশক্তির এক দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। গত শুক্রবার রাতে সিজারিয়ান সন্তান জন্মের দুই দিন পর রোববার (২৯ জুন) সকাল ১০টায় তিনি হাসপাতালেই এইচএসসি দ্বিতীয় লিখিত পরীক্ষায় অংশ নেন।ইশার পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, শরীয়তপুর সদর উপজেলার তুলাশার গ্রামের মো. শাহআলম সিকদারের মেয়ে ইশা আলমের বিয়ে হয় গত বছর ২৮ জুন একই উপজেলার কাশাভোগ এলাকার মুজিবুর রহমানের ছেলে মাহবুবুর রহমান তুষারের সঙ্গে। তুষার ঢাকার একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। সন্তানসম্ভবা অবস্থায় চলতি এইচএসসি পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছিলেন ইশা। গত বৃহস্পতিবার বাংলা প্রথম পত্র পরীক্ষা দিয়েছিলেন ইশা। পরে গত শুক্রবার (২৭ জুন) রাতে প্রসব বেদনা শুরু হলে তাকে শরীয়তপুর সদর উপজেলার নিপুণ ডায়াগনস্টিক অ্যান্ড ক্লিনিকে ভর্তি করা হয়। ওই রাতেই কন্যাসন্তান জন্ম দেন তিনি। এরপর রোববার সকাল ১০টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত ছিল তার বাংলা ২য় পত্র পরীক্ষা।ইশার পরীক্ষা কেন্দ্র ছিল সরকারি গোলাম হায়দার খান মহিলা কলেজে। তবে শারীরিক অবস্থার কারণে কলেজের শিক্ষক মো. মাসুম মিয়ার পরামর্শে কলেজ অধ্যক্ষের কাছে ক্লিনিকেই পরীক্ষা দেওয়ার অনুমতি চেয়ে আবেদন করা হয়। অধ্যক্ষের অনুমতি পাওয়ার পর রোববার সকালে একজন মহিলা শিক্ষক ও একজন মহিলা পুলিশ উপস্থিত থেকে নিপুণ ক্লিনিকের বিছানাতেই পরীক্ষার আয়োজন করা হয়।ইশা আলম বলেন, “আমি আইন পড়তে চাই, বিচারক হয়ে নিপীড়িত নারীদের পাশে দাঁড়াতে চাই। সন্তান জন্মের পরও পরীক্ষা দিতে পেরে আমি আনন্দিত। আল্লাহ, শিক্ষক, পরিবার, সহকর্মী ও চিকিৎসকদের প্রতি আমি কৃতজ্ঞ।”তিনি আরও বলেন, “গর্ভকালীন সময়েই পরীক্ষার সময় চলে আসে। তবে আমি মনোবল হারাইনি। পরিবারের উৎসাহ ও সহযোগিতায় এই অবস্থাতেও পরীক্ষায় বসার সিদ্ধান্ত নেই। আমি বিশ্বাস করি, মনোবল ধরে রাখলে প্রত্যেক মেয়েই নিজের লক্ষে পৌঁছাতে পারে।”ইশার মা সুহাদা বেগম বলেন, মেয়ের এমন সাহস আর মনোবল দেখে গর্বিত। এমন অবস্থায়ও যে সে পরীক্ষা দেবে, তা কখনও ভাবিনি। সবাই দোয়া করবেন আমার মেয়ে ও নাতনির জন্য।ইশার স্বামী মাহবুবুর রহমান তুষার বলেন, ইশা সবসময় পড়াশোনার বিষয়ে আমাকে পাশে থাকতে বলেছে, আমি চেষ্টা করেছি সাপোর্ট দিতে। কিন্তু সন্তান জন্মের পরপরই পরীক্ষা দেবে তা কখনও ভাবিনি। পরে আমি মহিলা কলেজের অধ্যক্ষের কাছে লিখিতভাবে বিষয়টি জানাই। এরপরেই স্যারসহ সকলে ওকে সহযোগিতা করেছেন পরীক্ষা দেওয়ার জন্য। আল্লাহ ওদের সুস্থ রাখুক।একটি বেসরকারী ক্লিনিকের গাইনি বিশেষজ্ঞ ও কনসালট্যান্ট ডা. হোসনে আরা বেগম রোজী বলেন, ২৭ তারিখ রাতে প্রসববেদনা নিয়ে ইশা আমাদের কাছে এসেছিলেন। তার প্রবল ইচ্ছে ছিল পরীক্ষা দেওয়ার। তার মনের শক্তির কারণে শেষ পর্যন্ত পরীক্ষা দিয়েছে। এখন মা ও মেয়ে দুজনেই সুস্থ আছেন।এ ব্যাপারে জানতে চাইলে কেন্দ্র সচিব ও সরকারি গোলাম হায়দার খান মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর মো. ওয়াজেদ কামাল বলেন, শিক্ষকরা সবসময় মানবিক। সিজারিয়ান পদ্ধতিতে সন্তান জন্ম দেওয়ার পরও পরীক্ষায় অংশ নেওয়ার অদম্য ইচ্ছা প্রকাশ করে ইশা আলম। বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে কলেজ কর্তৃপক্ষ হাসপাতালে এক নারী শিক্ষক ও নারী পুলিশ সদস্যের উপস্থিতিতে পরীক্ষার ব্যবস্থা করে। ইশার হাতের লেখা ছিল সুন্দর, পরীক্ষাও দিয়েছে ভালো। মা ও নবজাতক দুজনেই সুস্থ। আল্লাহর কাছে প্রার্থনা, একদিন এই শিশুকন্যাও গ্র্যাজুয়েট হয়ে মায়ের স্বপ্ন পূরণ করুক।

The Dhaka News Bangla

প্রকাশক এবং সম্পাদক : তাসকিন আহমেদ রিয়াদ 

কপিরাইট © ২০২৫ The Dhaka News Bangla । সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত