
‘মা’ প্রত্যেক সন্তানের অতি আপনজন। জন্মের প্রথম মুহূর্ত থেকেই যার কোল হয়ে ওঠে সন্তানের প্রথম আশ্রয়, তিনিই মা। মাকে ভালোবাসা কিংবা শ্রদ্ধা জানাতে কোনো উপলক্ষ লাগে না। প্রতি বছর মে মাসের দ্বিতীয় রোববার ‘বিশ্ব মা দিবস’ হিসেবে পালিত হয়ে আসছে। মা দিবস উপলক্ষ্যে কয়েকজন তরুণ শিক্ষার্থীর চোখে মায়ের কথা তুলে ধরছেন তানজিদ শুভ্র…
আমার সব অর্জনের পেছনে আমার মা
মুহিবুল হাসান রাফি
শিক্ষার্থী, সরকারি সিটি কলেজ, চট্টগ্রাম।
মা এক অমূল্য রত্ম। মা কে নিয়ে লিখতে গেলে প্রতিবারই বরফের ন্যায় জমে যায় চোখের ক্রন্দনে, অন্তরে সিলগালা হয়ে নৈঃশব্দ্যে বোবা হয়ে যায়। প্রত্যেকের মা কোনো না কোনোভাবে সেরা। কিন্তু আমার মা অলরাউন্ডার। এত কষ্ট, এত ত্যাগ করেছেন আমার জন্য, আমাদের জন্য তাঁর বিন্দুমাত্র প্রকাশ করা আমার পক্ষে সম্ভব নয়। কত পুড়েছেন, কত ভিজেছেন, কত শুকিয়েছেন তা ভাবতেই শিহরিত হয়ে শরীরের লোম খাড়া হয়ে যায়। নিজ চোখে দেখেছি মায়ের কত ঘাম ও চোখের পানি মাটির সাথে মিশেছে। কত কষ্ট চেপে হেসেছেন অনর্গল। আজকে এই আমি যত যোগ্যতা অর্জন, এর পিছনে আদি ভূমিকা একমাত্র আমার মায়ের। দিনশেষে যখন শুনি, এই ছেলেটা ওর ছেলে। বিশ্বাস করুন, তখন খুশিতে এত আত্মহারা হয়ে যাই যে চোখ দিয়ে নোনতা জল গড়িয়ে পড়ে।
মর্যাদা, অবদানে মা থাকুক হাসি-খুশি
নুসরাত জাহান জেরিন
শিক্ষার্থী, ব্রাহ্মণবাড়িয়া আইন কলেজ।
‘মা’ শব্দটি অন্য রকম অনুভূতি। এই অনুভূতির সঙ্গে কোন কিছুর তুলনা হয় না। যদি বলা হয়ে থাকে জীবনের শ্রেষ্ঠ উচ্চারণ কী, সেই উচ্চারণ হলো- মা। ত্যাগের দৃষ্টান্ত, নাড়ি ও মায়ার বাঁধন, আদর-সোহাগ, লালন-পালন, সারাজীবন নিবিড় বন্ধন, নিরবিচ্ছিন্ন আপন, এসব বিচারে মা-ই শ্রেষ্ঠ। আমাদের সকলের পার্থিব জীবনের সৃষ্টির উৎসে মায়ের ভূমিকা অনন্য।
ব্যক্তিগত জীবনে মাকে যেমন দেখেছি আমি, আমরা, সকলেই এই কথা অস্বীকার্য যে– মা আমাদের জন্য যা করেছেন, এবং নিঃস্বার্থভাবে যাপিত জীবনে মঙ্গল কামনায় মায়ের মতো আর কেউ নেই। ধর্মীয় মূল্যবোধেও মাকে শ্রেষ্ঠত্ব দেওয়া হয়েছে। মায়ের মর্যাদা দিবস কেন্দ্রিক নয়, প্রতিনিয়ত অফুরন্ত শ্রদ্ধাসনে মা আসীন। তবে দুঃখবোধ হয় তখন, বিভিন্ন ক্ষেত্রে মায়ের অবমূল্যায়ন, অবহেলা, যথাযথ মর্যাদা প্রদানে নেতিবাচক দৃষ্টান্ত যখন চোখে পড়ে। মায়ের মূল্যায়ন যথার্থই থাকা উচিত। তাই মা দিবসে প্রত্যাশা অবহেলা, অযত্নে মায়ের দুঃখ-কষ্ট ম্লান করুক, বৃদ্ধাশ্রমে, পথে, প্রান্তরে, নিঃসঙ্গতায় মায়ের দীর্ঘশ্বাসের শেষ হউক। হেসে উঠুক, ভালো থাকুক পৃথিবীর সকল মা।
আমার সুহৃদ, আমার মা
মাইমুনাহ ফারিয়া জাহান,
হোম ইকোনমিক্স, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।
আমার আম্মুর কাছে আমি একখানা পত্র লিখতে চাই। কিন্তু রবি ঠাকুর বলেছেন, ভারাক্রান্ত মন নিয়ে দীর্ঘ পত্র না লিখতে। তাই সংক্ষেপে বলতে চাই, আমার জীবনের একমাত্র শান্তিপ্রিয় মানুষ তিনি। ভালবাসি অনেক আম্মু। কখনো বলা হয়ে উঠে নি।
বড় হতে হতে আব্বু-আম্মু কাছে থেকে যে দূরে সরে যেতে হয় তা জানা ছিল না। হাজার হাজার কিলোমিটার দূরের শহরে থাকতে হয় আম্মুর থেকে! যে শহরে আম্মু নেই, ওই শহরে আমার তিন বেলা দুঃখ রান্না করতে হয়।
মায়েরা অদ্ভুত শক্তি নিয়ে থাকে। আমার অসুস্থতা, আগে থেকে কিভাবে যেন তিনি জেনে যায়। আমার আম্মু মনে করে আমিই সেরা, আম্মু মনে করে বলেই “আমি সেরা হয়ে উঠেছি।” আমার আম্মুই হয়তো আমার আদর্শ বিদ্যা নিকেতন। সব থেকে খারাপ লাগা, অসহায় লাগার মুহুর্তে একমাত্র আমার আম্মুর কথাই মনে পড়ে। তিনি এক কথায় আমার বেস্ট ফ্রেন্ড এর মত। আমার পাশে থাকে অলৌকিক ভাবে সব সময়। এত বড় হয়েছি, তবুও এখনো আমাকে আমার পড়ালেখা বুঝিয়ে দেয়।
আমার আম্মুকে কোন দুঃখ স্পর্শ না করুক। আমার আম্মু সুস্থ থাকুক, ভালো থাকুক। হাসি মুখেই আমার দিকে তাকিয়ে থাকুক সব সময়। অশান্তি অস্থিরতার দুনিয়ায় সুখের হিসাব কষার ফুরসৎ একমাত্র আমার আম্মু। আল্লাহ যেন আমার আয়ুর অর্ধেক আয়ু আমার আম্মুকে দিয়ে দেয়। তবুও বেঁচে থাকুক যুগ যুগ ধরে। দিন শেষ সব কথার শেষ যেন আমার আম্মু-ই থাকে।
আমার আলোর দিশারী আমার মা
আরিফুল ইসলাম আকাশ
শিক্ষার্থী, ঝালকাঠি সরকারি কলেজ।
যুগে যুগে বহু বিখ্যাত ব্যাক্তিগণ মা নিয়ে অসংখ্য কবিতা, গান, গল্প, উপন্যাস ও প্রবন্ধ। জীবনের উত্থান পতনের হিমেল হাওয়ায় যে মানুষ টি ডানা মেলে আগলে রেখেছে তাঁকে কখনোই বলা হয়নি- ভালোবাসি, মা। মাকে নিজের থেকেও ভালোবেসে বলতে পেরেছে পৃথিবীতে এমন মানুষ নিতান্তই কম আছে। সন্তান অসুস্থ হলে আল্লাহর আরসে আরজি করে রাত কাটায় যে জননী তাঁকে ভালোবাসতে নির্দিষ্ট কোনো দিন লাগে না, লাগে না নির্দিষ্ট সময়।
আমার মাকে বুঝাতে কিংবা তার স্নেহ ভালোবাসা বুঝাতে কোনো উপমা কিংবা রূপক নেই, সবই তাঁর পদধূলি সমতুল্য। রাতে পিকনিক কিংবা মাহফিলে গেলে ভোর রাত পর্যন্ত যে মানুষটা দরজার পাশে বসে থাকতো, সে মানুষটার অনুপ্রেরণায়ই রাতের পর রাত তাঁকে ছাড়া হোস্টেলে থাকা শিখে গেছি। হোস্টেলের ডাইনিং এ বসে মনে পরে যায় মা তোমার স্নেহের হাতে তুলে দেয়া মাছ মাংসের বড় টুকরোটার কথা।
মায়ের আঁচল পৃথিবীর সবচেয়ে শক্ত প্রাচীর যা সন্তানকে দূর্গের মত নিরাপদ রাখে। সবার ছুটি হয় কিন্তু মায়ের হয় না। একজন মা হলেন আদর্শ শিক্ষক, যত্নবান ডাক্তার, সুরক্ষার সেরা সিকিউরিটি, প্রেরণার বাতিঘর। মায়ের আঁচলের গন্ধে যেন দূর হয়ে যায় সকল ক্লান্তি অবসাদ। মায়ের দরাজ কন্ঠে হারিয়ে যায় বিষন্নতা।
আমার খারাপ সময়ে সবসময় পাশে থেকে সাহস জুগিয়েছেন আমার মা। আমিও তোমায় ভালোবাসি মা, যেমনি তুমি ভালোবেসে এই পৃথিবীর আলো দেখিয়েছো। এখনও তেমনই ভালোবাসি মা, যেমনি প্রথম শব্দ শিখেছিলাম ‘মা’। জননীকে দিবোনা আঘাত করি গো এ পণ,/জননীর অশ্রু আর নাহি ভিজিবে এ ভূবন।
শুক্রবার, ১৬ মে ২০২৫
প্রকাশের তারিখ : ১১ মে ২০২৫
যুক্ত থাকুন দ্যা ঢাকা নিউজের সাথে