ডেস্ক নিউজ ||
মানবতাবিরোধী অপরাধ প্রমাণিত হওয়ায় সাবেক স্বৈরাচার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। এর পর বাংলাদেশ সরকার আনুষ্ঠানিকভাবে তার দণ্ড কার্যকর করার জন্য তাকে ফেরত চেয়েছে।২০২৪ সালের ৫ আগস্ট ছাত্রজনতার গণঅভ্যুত্থানের মুখে পালিয়ে ভারতের নয়াদিল্লিতে চলে যান শেখ হাসিনা। এরপর থেকে সেখানেই আছেন তিনি।ট্রাইব্যুনাল রায় ঘোষণার পর হাসিনাকে ফেরত চেয়ে যে বিবৃতি বাংলাদেশ দিয়েছে এতে কঠোর ভাষায় বলা হয়েছে, যদি মানবতাবিরোধী হাসিনাকে ভারত এখনো আশ্রয় দেয় তাহলে এটি “অত্যন্ত অ-বন্ধুত্বপূর্ণ এবং ন্যায়বিচারের প্রতি অবজ্ঞার সামিল হবে।”তবে তা সত্ত্বেও হাসিনাকে ভারত ফেরত দেবে না বলে সংবাদমাধ্যম আলজাজিরাকে বলেছেন দিল্লির জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ের দক্ষিণ এশিয়া বিষয়ক প্রফেসর সঞ্জয় ভরদ্বাজ। তার মতে ভারত মনে করে, হাসিনা রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার। তাই তাকে ফাঁসিতে ঝোলার জন্য ভারত ফেরত দেবে না।ভারত হাসিনা প্রতিহিংসার শিকার মনে করলেও, জাতিসংঘের প্রতিবেদনে উঠে এসেছে হাসিনার সরাসরি নির্দেশে আইনশৃঙ্খলাবাহিনী মাত্র কয়েকদিনের মধ্যে প্রায় ১ হাজার ৪০০ মানুষকে হত্যা করেছে।দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের এই প্রফেসর আরও বলেছেন, “ভারতের দৃষ্টিতে বাংলাদেশ এখন ভারত বিরোধীদের দ্বারা পরিচালিত হচ্ছে। প্রফেসর ইউনূস প্রায়শই ভারতের সমালোচনা করেন। যারা হাসিনাকে হটিয়েছে, তারা হাসিনাকে সমর্থন দেওয়ার জন্য ভারতকে দোষারোপ করে।”“এসবের মধ্যে যদি হাসিনাকে হস্তান্তর করা হয় তাহলে, যারা ভারত বিরোধীতা করছেন তাদের বৈধতা দেওয়া হবে।”— বলেন এ প্রফেসর।হাসিনাকে মৃত্যুদণ্ড ও আনুষ্ঠানিকভাবে ফেরত চাওয়ার ব্যাপারে আনুষ্ঠানিক বিবৃতি দিয়েছে ভারত। দেশটি বলেছে, তারা হাসিনার দণ্ডের ব্যাপারে অবগত। এছাড়া বাংলাদেশের সঙ্গে ভারত ভালো সম্পর্ক চায় বলেও এতে উল্লেখ করা হয়।কিন্তু ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক ভালো না। হাসিনার সময় দিল্লির সঙ্গে ঢাকার যে উষ্ণ সম্পর্ক ছিল, সেটি এখন নেই। এর বদলে ভারতকে বাংলাদেশ অবিশ্বাসের চোখে দেখে।বাংলাদেশে দায়িত্ব পালন করা ভারতের সাবেক হাইকমিশনার পিনাক রঞ্জন চক্রবর্তী বলেছেন, “হাসিনাকে কীভাবে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দেবে নয়াদিল্লি?”সাবেক এ রাষ্ট্রদূত বলেছেন, যতদিন হাসিনাকে বাংলাদেশ ফেরত না দেবে ততদিন দুই দেশের মধ্যে খারাপ সম্পর্ক বিদ্যমান থাকবে। তবে এমনটি সবসময় চলতে পারে না। তার মতে, ভারত এখন নির্বাচনের জন্য অপেক্ষা করছে। যখন নির্বাচিত কোনো সরকার আসবে তখন হয়ত সম্পর্ক ভালো হবে। তিনি বলেন, “ভারতকে এখন অপেক্ষা করতে হবে। বাণিজ্য ও অন্যান্য বিষয়কে সম্মন্নত রাখতে হবে। কিন্তু অন্য বিষয়গুলো নিয়ে ঝামেলা করা যাবে না।”ভারতের জিন্দাল গ্লোবাল বিশ্ববিদ্যালয়ের দক্ষিণ এশিয়া বিষয়ক বিশেষজ্ঞ প্রফেসর সিধার্ত দত্ত বলেছেন, “ভারত হাসিনাকে নিয়ে একটি ফাঁদে পড়ে গেছে। কিন্তু হাসিনা বিরোধী যে অবস্থা বাংলাদেশ চলছে এ বিষয়ে ভারত অন্ধ নয়।”তিনি বলেন, ভারত চাইবে আবার যেন আওয়ামী লীগ এবং মানবতাবিরোধী হাসিনা ক্ষমতায় আসুক। কারণ হাসিনা ভারতের জন্য সবচেয়ে যোগ্য ব্যক্তি।তবে ভারতকে এখন এই হিসাব পরিবর্তন করতে হবে এবং বাংলাদেশের অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে ভালো সম্পর্ক গড়তে হবে। সঙ্গে হাসিনাকে ফেরত দেওয়ার যে বিষয়টি আসছে সেটি ভারতকে উতরাতে হবে।— বলেন সিধার্ত।সূত্র: আলজাজিরা
কপিরাইট © ২০২৫ The Dhaka News Bangla । সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত