তানজিদ শুভ্র, ক্যাম্পাস প্রতিনিধি ||
ফেসবুক মানেই স্মৃতির অ্যালবাম। এখানে মানুষের সম্পর্ক তৈরি ও ধরে রাখার কৌশলগুলো সবসময়ই পরিবর্তনশীল। বন্ধুদের পোস্ট, মেসেঞ্জারে আড্ডা, কিংবা রিঅ্যাকশনের রঙিন জগৎ সব মিলিয়ে আমাদের ভার্চুয়াল জীবনের বড় অংশ জুড়ে আছে এই প্ল্যাটফর্ম। তবে এক সময় ফেসবুকে এক বিশেষ ফিচার ছিল, যা শব্দ ছাড়াই কারও প্রতি আগ্রহ বা দৃষ্টি আকর্ষণের মাধ্যম হয়ে উঠেছিল। সেই ফিচারটির নাম পোক (Poke)। একসময় ফেসবুকের সিগনেচার ফিচার হিসেবে তরুণ-তরুণীদের কাছে এটি ছিল অত্যন্ত জনপ্রিয়। দীর্ঘ সময় আড়ালে থাকার পর আবারও ফেসবুক এই ফিচার ফিরিয়ে এনেছে নতুন আঙ্গিকে। ফলে প্রশ্ন জাগছে, আসলে এই পোক কী, কেন এটি হারিয়ে গিয়েছিল, আর এখন কেন আবার জনপ্রিয় হচ্ছে?ফেসবুকের যাত্রা শুরু ২০০৪ সালে। ঠিক সেই সময়ই পোক ফিচারটি চালু হয়। উদ্দেশ্য ছিল সহজ, কোনো ম্যাসেজ না লিখেই, কারও কাছে “হ্যালো” কিংবা “আছো?” বলা ছাড়াই তাকে একটু দৃষ্টি আকর্ষণ করা। অনেকের কাছে এটি ছিল আড্ডা শুরু করার কৌশল, কারও কাছে ছিল হালকা ফ্লার্ট করার মাধ্যম, আবার কেউ কেবল বন্ধুদের সাথে মজা করার জন্যও ব্যবহার করত। কোনও ম্যাসেজ টাইপ করার ঝামেলা নেই, শুধু একটা পোক পাঠালেই হলো, বিপরীত পাশের মানুষ বুঝে নেবে আপনি তার দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চাইছেন। বিশেষ করে স্কুল ও কলেজ পড়ুয়া শিক্ষার্থীরা সম্পর্কের শুরুতে বরফ গলানোর জন্য পোককে ব্যবহার করত বেশি।শুরুতে পোক ফিচার ছিল দারুণ জনপ্রিয়। কিন্তু সময় বদলালো, ফেসবুকও বদলালো। প্ল্যাটফর্মে আসতে লাগলো একের পর এক নতুন ফিচার। যুক্ত হলো ম্যাসেঞ্জার, যেখানে সরাসরি চ্যাট করার সুযোগ পাওয়া গেল। এল লাইক বাটন, রিঅ্যাকশন, স্টিকার, এমনকি ভিডিও কলের মতো ফিচারও। ফলে পোকের মতো সরল একটি ফিচার ধীরে ধীরে গুরুত্ব হারাতে শুরু করল। ব্যবহারকারীরা যোগাযোগের জন্য নতুন মাধ্যমগুলো বেছে নিতে শুরু করলে পোক ক্রমেই পেছনে পড়ে যায়। ২০১৪ সালের পর মূল অ্যাপ থেকে ফিচারটি একপ্রকার আড়ালেই চলে যায়। ব্যবহারকারীদের অনেকেই ভুলে যান যে একসময় ফেসবুকে এমন একটি মজার ফিচার ছিল।তবে প্রযুক্তি জগতে একটি বিষয় প্রমাণিত, পুরনো কিছু জিনিস অনেক সময় আবার ফিরে আসে, আর ফিরে আসার পর তা আগের চেয়েও বেশি জনপ্রিয় হতে পারে। মেটা কর্তৃপক্ষও এবার সেই পথেই হেঁটেছে। তারা ঘোষণা দিয়েছে, নতুন করে পোক ফিচার ফিরিয়ে আনা হচ্ছে। তবে এবার এটি শুধু নস্টালজিয়ার জন্য নয়, বরং আরও আধুনিক ছোঁয়ায়।এবার ফেসবুক অ্যাপে যুক্ত হয়েছে একটি বিশেষ Pokes Page, যেখানে সহজেই দেখা যাবে কে কাকে পোক করেছে। আগে বিষয়টি অনেক ব্যবহারকারীর চোখ এড়িয়ে যেত, ফলে ধারাবাহিকতা হারিয়ে ফেলত। এখন একটি আলাদা ড্যাশবোর্ডে সবকিছু দেখা যাবে। আরও মজার বিষয় হলো, এবার পোক ফিচারের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে নতুন কিছু টুইস্ট। বন্ধুদের মধ্যে যত বেশি পোক আদান-প্রদান হবে, তত ভিন্ন ভিন্ন ইমোজি দেখা দেবে। একে বলা হচ্ছে একধরনের গ্যামিফিকেশন, যা মূলত স্ন্যাপচ্যাটের মতো অভিজ্ঞতা দেবে ব্যবহারকারীদের।পোক করার নিয়মও এখন আরও সহজ। কারও প্রোফাইলে গেলেই সরাসরি পোক করার অপশন পাওয়া যাবে। একবার কাউকে পোক করলে সে নোটিফিকেশন পেয়ে যাবে। চাইলে সঙ্গে সঙ্গে রিপ্লাই দিতে পারবে। আবার যদি পোক ফিরিয়ে দিতে না চান, সেক্ষেত্রে সেটি মুছেও দেওয়া যাবে। আর হ্যাঁ, একবার কাউকে পোক করার পর যদি সে রিপ্লাই না দেয়, তবে আবার পোক করতে হলে ২৪ ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হবে। এভাবে পোক করার সুযোগ সীমিত রাখার মাধ্যমে ফেসবুক একধরনের ভারসাম্য বজায় রাখতে চায়, যাতে এটি অতিরিক্ত বিরক্তির কারণ না হয়।কিন্তু প্রশ্ন হলো, আজকের দিনে যেখানে ভিডিও কল, ভয়েস নোট বা রিলসের মতো আধুনিক যোগাযোগের মাধ্যম আছে, সেখানে একটি সরল পোক ফিচার কেন আবার জনপ্রিয় হচ্ছে? উত্তর লুকিয়ে আছে মানুষের অনুভূতিতে। অনেক পুরোনো ব্যবহারকারীর কাছে এটি ফিরে আসা মানেই একধরনের নস্টালজিয়া। তারা মনে করতে পারেন ফেসবুকের শুরুর দিনের সেই সরল আনন্দগুলো। আবার নতুন প্রজন্মের কাছে পোক দারুণ দ্রুত যোগাযোগের একটি কৌশল। ম্যাসেজ লিখতে সময় লাগবে, কিন্তু পোক পাঠাতে মাত্র এক সেকেন্ড। আরেকটি কারণ হলো, ম্যাসেজ না লিখে, হালকা আড্ডা শুরুর জন্য, কিংবা শুধু দৃষ্টি আকর্ষণ করতে পোক দারুণ কার্যকর। অতএব, মজার ছলে হোক বা সম্পর্কের শুরুতে ‘বরফ গলানোর’ কৌশল-পোক আবার আলোচনায়।প্রযুক্তি জগতে টিকে থাকতে হলে সবসময় নতুন কিছু দিতে হয়, আবার পুরনো কিছু ফিরিয়ে এনে মানুষকে চমকও দিতে হয়। ফেসবুক পোক ঠিক সেই উদাহরণ। এটি একসময় ছিল কেবল একটি সাধারণ ফিচার। কিন্তু আজ এটি একদিকে পুরোনো ব্যবহারকারীদের স্মৃতি ফিরিয়ে দিচ্ছে, অন্যদিকে নতুন ব্যবহারকারীদের জন্য তৈরি করছে ভিন্ন ধরনের মজার অভিজ্ঞতা।সব মিলিয়ে বলা যায়, পোক এখন আর কেবল অতীতের স্মৃতি নয়। এটি নতুনভাবে আবির্ভূত হয়ে বর্তমান ডিজিটাল যুগের দ্রুত ও মজার যোগাযোগের মাধ্যম হিসেবে জায়গা করে নিচ্ছে। আগামী দিনে এটি কতটা জনপ্রিয় হবে তা সময় বলে দেবে। তবে নিশ্চিতভাবে বলা যায়, ফেসবুকের পোক ফিচার আবার আলোচনায়, আবার মানুষের কাছে আকর্ষণীয় হয়ে উঠছে।
কপিরাইট © ২০২৫ The Dhaka News Bangla । সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত