সম্পাদকীয় ||
গণতন্ত্রের মৌলিক ভিত্তি হলো আইনের শাসন। যেখানে আইন সবার জন্য সমানভাবে প্রযোজ্য নয়, সেখানে গণতন্ত্র কখনোই কার্যকর হতে পারে না। দুঃখজনক হলেও সত্য, উন্নয়নশীল অনেক দেশে এখনো আইনের শাসনকে প্রভাবশালী গোষ্ঠী তাদের স্বার্থে বাঁকিয়ে নেয়। আদালতের রায় প্রদানে রাজনৈতিক প্রভাব, হস্তক্ষেপ কিংবা অঘোষিত চাপ অনেক সময় স্পষ্ট হয়ে ওঠে। অথচ আদালত জনগণের শেষ আশ্রয়স্থল হওয়া উচিত যেখানে বিচারপ্রার্থী ন্যায়বিচার পাবেন নির্ভয়ে ও নির্বিঘ্নে।কিন্তু বাস্তবতা ভিন্ন। বহু সময় দেখা যায়, আদালত প্রাঙ্গণে হাজিরা দিতে গিয়ে আসামিকে অপমান, কটূক্তি এমনকি শারীরিক আক্রমণের মুখোমুখি হতে হয়। বিচারকের উপস্থিতিতেও এমন অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি তৈরি হলে তা কেবল আসামির জন্য নয়, বিচার ব্যবস্থার জন্যও অপমানজনক। আদালতের দায়িত্বশীল পরিবেশে যদি নিরাপত্তাহীনতা তৈরি হয়, তবে জনগণ ন্যায়বিচারের প্রতি আস্থা হারাবে এতে কোনো সন্দেহ নেই।আসামি যেই হোন না কেন তিনি প্রাক্তন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা, রাজনীতিবিদ কিংবা সাধারণ নাগরিক বিচারের আগে কাউকে হেনস্তা করা আইনের শাসনের পরিপন্থী। মনে রাখতে হবে, কেউ অপরাধ করলে আইন অনুযায়ী তার শাস্তি হবেই। কিন্তু বিচারপ্রক্রিয়া শুরুর আগেই তার মানসম্মান ক্ষুণ্ণ করা কিংবা তাকে জনসম্মুখে অপদস্থ করা অন্যায় এবং অমানবিক। আদালত প্রাঙ্গণে বা আদালতের বাইরে এ ধরনের পরিবেশ সৃষ্টি হলে তা কেবল ন্যায়বিচারকে বাধাগ্রস্ত করে না, বরং একটি জাতির বিচার ব্যবস্থার প্রতি মানুষের আস্থাও দুর্বল করে।বিশ্বের উন্নত দেশগুলোতেও আসামি আদালতে হাজির হলে কঠোর নিয়মকানুন মেনে তার নিরাপত্তা ও মর্যাদা নিশ্চিত করা হয়। সেখানে আসামিকে উদ্দেশ্য করে আক্রমণাত্মক আচরণ করলে বিচারক নিজেই ব্যবস্থা নেন। অথচ অনেক উন্নয়নশীল দেশে এটি যেন সাধারণ ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে যা অত্যন্ত দুঃখজনক।ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করতে হলে আদালত প্রাঙ্গণে শৃঙ্খলা বজায় রাখা অত্যন্ত জরুরি। আসামিকে আদালতে আনা-নেওয়ার সময় পুলিশ প্রশাসনকে দায়িত্বশীলভাবে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। একইসঙ্গে আইনজীবীসহ আদালতের সংশ্লিষ্ট সবাইকে সচেতন থাকতে হবে যাতে বিচারাধীন ব্যক্তির প্রতি অযৌক্তিক আচরণ না ঘটে।সবশেষে বলা যায়, আদালত কেবল রায় ঘোষণার জায়গা নয়, এটি হলো ন্যায়বিচারের প্রতীক। সেই ন্যায়বিচারকে কলুষিত হতে দেওয়া যাবে না।আইন সবার জন্য সমান এমন বিশ্বাস মানুষের মনে স্থায়ী করতে হলে আদালত প্রাঙ্গণকে নিরাপদ করতে হবে এবং আসামির প্রতি মানবিক ও যৌক্তিক আচরণ নিশ্চিত করতে হবে। তবেই আইনের শাসন সুসংহত হবে এবং গণতন্ত্রের ভিত মজবুত হবে।
কপিরাইট © ২০২৫ The Dhaka News Bangla । সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত