বরিশাল মহানগরী বড় ধরনের ভূমিকম্পের কারণে ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয়ের সম্মুখীন হতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন নগর উন্নয়ন বিশেষজ্ঞ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলো। প্রাথমিক তদন্তে দেখা গেছে, বরিশাল সিটি কর্পোরেশন এলাকায় বাংলাদেশ ন্যাশনাল বিল্ডিং কোড (বিএনবিসি) অনুসরণ না করে ৩৫ হাজারেরও বেশি ভবন নির্মিত হয়েছে। এর মধ্যে বেশিরভাগ ভবন উপকূলীয় নরম পলিমাটির ওপর দাঁড়িয়ে থাকায় সামান্য কম্পনেও এগুলো ধসে পড়ার ঝুঁকিতে রয়েছে।
তদন্তে দেখা গেছে, নগরীর প্রায় প্রতিটি ওয়ার্ডে বহুতল ভবন নির্মাণে নিয়ম ভঙ্গ করা যেন এখন স্বাভাবিক হয়ে উঠেছে। মাটি পরীক্ষা ছাড়াই ভবন নির্মাণ, অনুমোদিত নকশার বাইরে অতিরিক্ত তলা, নিম্নমানের নির্মাণসামগ্রী ব্যবহার এবং ভবনের ন্যূনতম দূরত্ব ও খোলা জায়গার অভাব। দালালচক্রের মাধ্যমে দ্রুত অনুমোদন পাওয়ার কারণে বরিশাল এখন ভূমিকম্পের জন্য বিশেষ ঝুঁকিপূর্ণ শহর হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
সম্প্রতি ৫.৭ মাত্রার ভূমিকম্পে বরিশাল নগরীর অনেক ভবনে ফাটল দেখা দিয়েছে। দেয়াল, ছাদ ও পিলারে ক্ষতির চিহ্ন রয়েছে। সবচেয়ে খারাপ অবস্থা সিটি কর্পোরেশনের নগর ভবনের। ১৯৯০ সালে নির্মিত এই ভবনটি অনুমোদিত দুই তলার পরিবর্তে তিনতলা করা হয়েছিল। যদিও এটি একটি মাঝারি মাত্রার ভূমিকম্প, তবে প্রকৌশল বিভাগ ভবনটি ধসে পড়ার আশঙ্কা প্রকাশ করেছে। ইতোমধ্যে ভবনের ছাদের পলেস্তারা খসে পড়েছে এবং বিম ও দেয়ালে ফাটল দেখা দিয়েছে।
প্রতিদিন এই ভবনে সেবা নিতে আসেন অসংখ্য মানুষ। ৪২৬ জন কর্মকর্তা-কর্মচারীও ঝুঁকি নিয়ে এখানেই কাজ করছেন।
বিসিসির প্রধান প্রকৌশলী হুমায়ন কবির বলেন, এটি পৌর সময়ের ভবন, দুইতলার প্ল্যান থাকলেও পরে তিনতলা করা হয়েছে। মাঝারি ভূমিকম্পেও ধসের শঙ্কা রয়েছে।
বিসিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা রেজাউল বারী জানান, নতুন ভবন নির্মাণের জন্য মন্ত্রণালয়ে ইতোমধ্যে প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। শুধু নগর ভবন নয় সম্প্রতি ভূমিকম্পে বরিশালের বেশ কিছু বেসরকারি ভবনেও ফাটল দেখা দিয়েছে। ঝুঁকিপূর্ণ এসব ভবনে বসবাসকারীরা আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন। সচেতন নাগরিকরা বলছেন, ঝুঁকিপূর্ণ ভবনগুলো চিহ্নিত করে দ্রুত অপসারণ না করলে বড় বিপর্যয় ঠেকানো যাবে না।
বরিশাল অধিকারের আঞ্চলিক প্রধান আজিজ সাহিন বলেন, যে ভবনগুলো ঝুঁকিপূর্ণ সেগুলো দ্রুত অপসারণ করতে হবে। না হলে ভূমিকম্পে শহরে মৃত্যুর ঝুঁকি মারাত্মকভাবে বেড়ে যাবে।
বরিশাল সিটি কর্পোরেশন থেকে জানা গেছে, মোট হোল্ডিং সংখ্যা ৫৭,০০০। এর মধ্যে টিনশেড বাড়ির সংখ্যা ১৭,০০০, সাধারণ ভবনের সংখ্যা ৪০,০০০ এবং বহুতল ভবনের সংখ্যা ২০০টির বেশি।
বরিশাল এখন ভূমিকম্পের ঝুঁকিতে সবচেয়ে দুর্বল শহরগুলোর একটি, কারণ এখানে নির্মাণ কাজ বিএনবিসি না মেনে, নরম পলিমাটি এবং ঘনবসতির কারণে অবহেলা করা হচ্ছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, যদি এখনই ব্যবস্থা না নেওয়া হয়, তাহলে একটি মাঝারি মাত্রার ভূমিকম্প নগরজুড়ে ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয় ডেকে আনতে পারে।
বিষয় : ভূমিকম্প

রোববার, ০৭ ডিসেম্বর ২০২৫
প্রকাশের তারিখ : ০৫ ডিসেম্বর ২০২৫

যুক্ত থাকুন দ্যা ঢাকা নিউজের সাথে